হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
ইসলামে দাখেল হলেই তিন জমাতের গুণ-খাছিয়ত আর থাকে না এবং ঐ মানুষটিই হলো আল্লাহর অলি। ইসলামে দাখেল হওয়ার পথে মুসলমান, আমানু, মুত্তাকিন এবং মুমিন বলে সাব্যস্ত আছে। আর মুমিনগণই আল্লাহর দিদারে থাকেন। মুমিনের সাথে আলেম-মোল্লাদের বিরোধ চিরকালের। কাজেই ইসলামে দাখেল হওয়ার পর যার যার জীবনে সেই ইসলামকে ধারণ করে কায়েম থাকাই হলো মুক্তির শর্ত। ইসলাম ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই এবং ইহাই হলো আল্লাহর একমাত্র বিধান ইসলাম- যাকে দ্বীন-এ-মুহাম্মদী বলা হয়। ইসলামকে হেফাজত করা নয়, ইসলাম-ই আমাকে হেফাজত করবে, যদি আমি ইসলামে দাখেল হয়ে যাই। যেমন, ছালাত আমাকে সমস্ত অন্যায়-অশ্লীলতা হতে রক্ষা করবে, যদি মুছুল্লি ছালাতকে স্বীয় জীবনে কায়েম করে নেয়। নামাজ পড়া আর কায়েম করা আকাশ-জমিন প্রভেদ। যিনি নামাজ কায়েম করবে তাকেই নামাজ রক্ষা করবে, যিনি পড়বে তাকে নয়। কাজেই যারা ইসলাম হেফাজত করার ধূয়া তুলছে তাদের মধ্যে ইসলামের কিছুই নেই। তারা পথভ্রষ্ট। তাদের ধর্ম ইয়াজিদের প্রবর্তন করা একটি বিকৃত মতবাদ মাত্র। তা সার্বজনীন নয়, হতে পারে না। ইসলাম হতে বিচ্যুত হলেই সিরাতানুসারে পুনরুত্থিত হয়ে দোযখে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। মানুষের মানবাত্মা কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়, কোনো জাতি- গোত্রের নয়, ইহা হলো চিরন্তন-শাশ্বত, চিরসত্য পবিত্রতম একটি সিরাত-যাকে কোরানে সিবগাতাল্লাহ বলা হয়েছে। হাদিসে আখলাকিল্লাহ বলা হয়েছে বা আল্ ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত বলা হয়েছে। ইসলাম কোনো লৌকিক ধর্ম সৃষ্টি করে না, ভেদাভেদ বা দ্বন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি করে না। কারন, মানবাত্মা মানুষের মূল এবং চরম নিরপেক্ষ একটি সত্ত্বা।
‘কাজেই যার মধ্যে মানবাত্মার জাগরণ ঘটেছে তিনিই খাঁটি মুসলমান বা হিন্দু বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ ইত্যাদি, কেবল ভাষার বিভেদ। যারা সেই চিরন্তন-শাশ্বত মানবধর্ম ইসলামকে লাভ করতে পারেনি, আক্ষরিক অর্থে ধর্মকে বুঝেছে তাদের দ্বারাই ধর্মের নামে, ধর্মের ছদ্মাবরণে ঘটে যতো অঘটন।’
যারা ধর্মের হাকিকত বুঝে তারা অখন্ড-ই দেখতে পায়, তাদের মধ্যে প্রভেদ দৃষ্ট না হয়ে কেবল অভেদ-ই দৃষ্ট হয়। আর অভেদ সুন্দরের দৃষ্টি তখনই হয় যখন ইনছানি আত্মার জাগরণ ঘটে এবং তাদেরকেই বলা হয় “হিজবুল্লাহ” বা আল্লাহর দল। এরা কালেমার মাঝেই বাস করে। আল্লাহর দল যারা তাদেরকেই নবুয়তে বলা হয় নবী-রাছুল আর বেলায়েতে বলা হয় অলি-আউলিয়া। সেজন্যই যারা ইসলামে দাখেল হয়েছে বা হওয়ার সাধনা করছে তাদের মধ্যে ঐক্যতা, দয়া-মায়া, প্রেম- মহব্বত, ভ্রাতৃত্ববোধ থাকবে। এই জন্যই মানুষের মাঝে ঐক্যতা সৃষ্টি করা নামাজ, রোজা, সদকার চেয়েও উত্তম বলে তিরমিজের বর্ণিত হাদিস হতে জানা যায়। আর এ ঐক্যতা তখনই হবে এবং তাদের মধ্যেই হবে যারা স্বীয় সত্ত্বায় ইনছানি আত্মার জাগরণ ঘটিয়েছে। পুরোহিত, পাদ্রী, মোল্লা-মৌলবীরা করেছে লৌকিক ধর্মের অবতারণ। এরা বহু দল-উপদলে বিভক্ত আর ভুল অংকের ফল বহুই হয়। যারা আসলে ধার্মিক তথা দ্বীন-এ-মুহাম্মদীর অধিকারী তারা কখনো ধর্মের নামে ফেরকাবাজি, অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম, সন্ত্রাস বা মানুষ হত্যা ইত্যাদি করে না। এ সমস্ত অপরাধগুলো করা হলো হায়ানী আত্মা বা নফসে আম্মারার অধিকারী জীব মানুষের কাজ।
হায়ানী আত্মার অধিকারী মানুষের কোনো ধর্মই নেই, সে যতো রকম ইবাদত-বন্দেগী, পূজা-উপাসনাই করুক না কেনো বা যে ধর্মেরই হোক না কেনো। ইসলামের নামে ৩৪ টি দল বাংলাদেশে, ঐক্যতা কোথায় ? ডিগবাজি খেতে খেতে আরো যে বহু দলের সৃষ্টি হবে তা তাদের বিগত ইতিহাসই প্রমাণ। মৌলবী শাহ আহামদ শফি নামের সাথে বর্তমানে ‘পীরে কামেল’ লেবেলটিও যোগ করে নিয়েছেন। কি সুন্দর বাহারী লেবেল! বিষের বোতলে মধুর লেবেল! কারবালার শিক্ষা হতে যারা সত্যকে বুঝে নিতে পারেনি, উদ্ধার করতে পারেনি, তারা ধর্মান্ধ মৌলবাদীদেরকেও চিনতে পারবে না। রাছুলের কালাম হলো “এরা ধর্মীয় নিরাপত্তাসহকারেই থাকবে”। এটা বুঝা দরকার কাফের-নাস্তিকদের-কে চিনা সহজ কিন্তু ধর্মের ছদ্মাবরণে বাস করে যারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার বয়ান শুনান তাদেরকে চিনা সহজ নয়। এরাই হলো মুয়াবিয়া-ইয়াজিদ মোল্লার অনুসারী। তাদের দীলের দৈন্যতা ঢাকার জন্যই বেশ- ভূষণের এতো ঘটা। ধর্মের নামে ফেরকাবাজি, ফতোয়াবাজি, অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম এবং মানুষ হত্যা করে মূলতঃ পৃথিবীকে ধর্মশুন্য করার পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে ধর্মান্ধরা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং পটিয়াকেন্দ্রিক মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হচ্ছে সউদি আরবের অর্থায়নে। মুনাফেক সউদি সরকারের কারণে দ্বীন-এ-মুহাম্মদীর কি করুন অবস্থা তা জ্ঞানীগণ অবশ্যই জানেন। ২০০৪ সালের যুগান্তরের রিপোর্টে জানা যায়, হাটহাজারীর অর্ধশতাধিক মাদ্রাসার মধ্যে অন্ততঃ ৩০/৩৫টি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন যাবৎ জঙ্গি মৌলবাদী সংগঠন ‘হরকতুল জেহাদ’ কাজ করছে। তৎসঙ্গে আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাতে তাদের প্রশিক্ষণ কাজ চালাচ্ছে। দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় তারা গড়ে তুলেছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্রিয় নেতারা প্রতি দু’মাস অন্তর গোপনে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেখে আসে। লিবিয়া, আফগানিস্তানের সাথে তাদের যোগসূত্র রয়েছে। বলা যায় ধর্মের ছদ্মাবরণে ঐ সমস্ত মাদ্রাসাগুলো হলো জঙ্গি মৌলবাদী সৃষ্টির প্রজনন খামার, যেখানে সরলমনা শিশুদেরকে ধর্মের নামে জঙ্গি মৌলবাদী শিক্ষা দিয়ে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে মদনী নগরেও (যা কুখ্যাত ওহাবী হুসাইন আহামদ মদনীর নামে রাখা হয়েছে। এ ওহাবীই আল্লামা ইকবালকে প্রথম কাফের ফতোয়া দিয়েছিলো) তাদের আরো একটি জঙ্গিবাদ শিক্ষার ঘাঁটি রয়েছে। যাদের মূল হলো মুনাফেক সউদি সরকার এবং তাদের দ্বিতীয় ঘাঁটি দেওবন্দ মাদ্রাসা।
১৯৭৭ সাল হতে ব্যাপকভাবে সউদিদের আর্থিক সহায়তায় সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে নতুন নতুন কওমী-খারেজি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা শুরু হয় এবং সে সমস্ত মাদ্রাসায় ধর্মের নামে সউদি সরকারের ওহাবী মতবাদ প্রচার শুরু করে। যার মূল হলো ধর্মের নামে জঙ্গি মৌলবাদ সৃষ্টি করা এবং নবী-রাছুল, অলি- আউলিয়াদের, তাদের মাজার বা রঁওযা শরীফের এবং তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিরোধীতা করা, তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা। যদিও মুখে মুখে তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লামকে স্বীকার করে, বাস্তবে তাঁকে তারা একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশী কিছু মনে করে না। তার যথেষ্ট প্রমাণ তাদের লেখাগুলোতেই রয়েছে। তাদের যতো ভয় দ্বীন-এ-মুহাম্মদীকে নিয়ে। এ সত্যটি তুলে ধরলেই ঐ সমস্ত ধর্মান্ধদের আদিম চরিত্রটি প্রকাশ করে গোঁয়ার-গোবিন্দের প্রেত নৃত্য শুরু করে দেয়। সউদিদের লেবাছে বাস করা এ সমস্ত মৌলবাদী ওহাবীরা নাস্তিকদের চেয়েও ভয়ংকর। জঙ্গি মৌলবাদীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১০ কিঃ মিঃ দূরে ভুজপুর থানার কাজিরহাট এলাকায় যে ধরনের বিভীষিকাময় তান্ডব চালিয়েছে তা আফ্রিকার বন্য পশুদেরকেও হার মানিয়েছে। মানুষ হত্যা, ৭৯টি মোটরসাইকেল, জিপ, মাইক্রোবাস, মিনিট্রাক মিলে ১০টি গাড়ী পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। মসজিদে গিয়ে মিথ্যা মাইকিং করে এ ধরনের জঘণ্য ক্রিয়া-কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মৌলবাদীগণ (১৩ই এপ্রিল/২০১৩ কালের কন্ঠসহ সব জাতীয় পত্রিকাতেই এ সংবাদটি এসেছে)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লামের বাণী হলো – “যার হাত ও জবান থেকে প্রতিবেশীর মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ নিরাপদ নয় সে মুসলমান নয়”। আরো বলেছেন – “সেই ব্যক্তি মুসলমান যার উপর অন্য কারো কোনো ভয় নেই, সন্দেহ নেই, অবিশ্বাস নেই।”
কাজেই জঙ্গি ওহাবী মৌলবাদীগণ কি করে মুসলমান? মুসলমান নয়। মুনাফেক ওহাবী সউদি সরকার আরো পূর্ব হতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করে আসছে এবং জামায়াতিদের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে। এ জামায়াতিরা টাকা দিয়ে তাদের দোসর কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে রাস্তায় মিছিল করার জন্য নিয়ে আসে (দৈনিক যুগান্তর, ১৯শে মার্চ/২০১৩)। যা তাদের চিরাচরিত নিয়ম। এ সমস্ত কওমী মাদ্রাসায় ধর্মের নামে নিছক কতোগুলো আক্ষরিক বিদ্যা এবং জঙ্গিবাদ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এ সমস্ত জঙ্গি মৌলবাদীরা যুগে যুগে এক এক ডিগবাজিতে এক এক নাম ধরে বিরাজ করে বিধায় সাধারণ মানুষ তাদেরকে চিনতে ভুল করে তাদের মতানুসারী হয়ে দ্বীন-এ-মুহাম্মদী বা ইসলাম হতে অনেক দূরে সরে যায়। এ সমস্ত অন্ধ-বধিরগণ ভাবে এটাই সঠিক পথ। পাকিস্তানে মওদুদীর সময় যতো বড় বড় গন্ডগোল হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই হয়েছে মওদুদীর কারণে (মওলানা আবদুল আউয়ালের রচিত “জামায়াতের আসল চেহারা”)। সাঈদীর ভুল তাফসিরের প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার জামিয়া আহমেদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ১০জন বিশিষ্ট আলেমকে হত্যার পরিকল্পনা করে জামায়াতিরা (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৫ই মার্চ/২০১৩, যুগান্তরসহ অন্যান্য সব জাতীয় পত্রিকাই এ খবর এসেছিলো) এবং হত্যার পরিকল্পনাকারীরা শেষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছে। আসলে এটাই হলো তাদের ধর্ম। এরা কখনো কুকুরে চড়ে বেড়ায়, কখনো বাঘ-ভাল্লুকে চড়ে বেড়ায়, কখনো গাধার পৃষ্ঠে চড়ে বেড়ায় আর ধর্মের নামে, ধর্মের ছদ্মাবরণে জঘণ্য ক্রিয়া-কর্ম করে চলে, যদিও তারা আকৃতিতে মানুষের মতো। এখন তাদের হাতে তেমন কোনো অস্ত্র নেই, পাকিস্তানী সৈন্যগণও নেই যে তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করবে, তাতেই জামায়াতিরা সমস্ত দেশজুড়ে যে ধরনের জঘণ্যতম বিভীষিকাময় তান্ডব চালাচ্ছে, শহীদ মিনার ভেঙ্গে, হত্যা, লুটপাট আর হিন্দুদের ঘরবাড়ি-মন্দিরে অগ্নি সংযোগ করে তা ভাবনার বিষয়। আর ৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় যখন তাদের হাতে অস্ত্র ছিলো এবং তাদের দোসর পাকিস্তানী সৈন্যগণও তাদের পক্ষে ছিলো তখন তারা কি ধরনের জঘণ্য লঙ্কাকান্ড ঘটিয়েছিলো আশা করি নতুন প্রজন্ম কিছুটা হলেও উপলদ্ধি করতে পারবে।
জামায়াতে মওদুদীরা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা কতটা নির্লজ্জ, ভয়ংকর, নিষ্ঠুর এবং মানবতাবিরোধী। ধর্ম হলো তাদের ছদ্মাবরণের একমাত্র হাতিয়ার। এটা দিয়ে সাধারণ মানুষকে পোষ মানিয়ে নেয়। চাঁদে দেখা যাবার সংস্কৃতিটা চন্দ্রপাড়ার পীর সুলতান ফজল সাহেবের প্রথম স্ত্রীর মেয়ের জামাই মাহাবুব- যিনি নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ গ্রামে খানকা তৈরী করেছেন, এখন তিনি থাকেন ঢাকার আরামবাগে। তার ভক্তগণও প্রচার করেছিলো এবং পত্রিকায় লিখেছিলো যে, চাঁদের মধ্যে নাকি দেওয়ানবাগীকে (মাহাবুবকে) দেখা গেছে। আশ্চর্য হতে হয় যে, মানুষ কতোটুকু ধর্মান্ধ এবং নির্বোধ হলে এ সমস্ত উদ্ভট কথাবার্তার আমদানী করতে পারে। দলীয় নেতাকে অলি-বুযুর্গ বানানোর কতো ফন্দি-ফিকির যে এ ধরনের ধর্মান্ধরা করে চলেছে তার ইয়ত্তা নেই। কেরামতের হাকিকত বুঝতে না পেরে ধান্ধাবাজির কতো ফন্দি-ফিকির যে এরা করে চলছে তা ভাবলে আশ্চর্য্য হতে হয়।
হযরত গাউছে পাক আবদুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলায়হি বলছেন – “কেরামত হলো পুরুষের হায়েজের মতো”। এখন হায়েজওয়ালা পীর সাহেবের আর অভাব নেই। কিছুদিন পরপরই তাদের হায়েজ শুরু হয়। আর সাঈদী বা সাঈদীর সংগঠন জামায়াতে মওদুদী হলো দ্বীন-এ-মুহাম্মদী এবং অলি আউলিয়াদের ঘোর বিরোধী। তারপরও তাকে ফাঁসির রায় হতে বাঁচানোর জন্য এবং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য চাঁদে দেখা গেছে বলে জঘণ্যতম ধোঁকার আশ্রয় নিয়েছে। তবে শীতকাল আসলে তাদেরকে হয়তো সূর্যেও দেখা যেতে পারে ! কারণ, তখন সূর্যের তাপ কম থাকবে তো তাই। এজন্যই বাংলার একটি প্রবাদ হলো “হুজুগে বাঙালী”! তথাকথিত ধার্মিকেরা আরবী, ফার্সী, সংস্কৃত বিভিন্ন ভাষার দখলদারিত্ব প্রদর্শন করে বা লাইসেন্স নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে এবং ধর্মের বাণীর আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে বা কালাম শাস্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করে ধর্মের মূল হাকিকত ও উদ্দেশ্য হতে মানুষকে দূরে সরিয়ে ফেলছে তথা পথভ্রষ্ট করে চলেছে। তাদের এই সমস্ত আক্ষরিক ব্যাখ্যার কারণে ঐক্যতার পরিবর্তে বহু মতভেদ, দ্বন্দ্ব-বিভেদ, ফতোয়ার বিচিত্র ডিগবাজি, ধর্মের নামে প্রতারণা শুরু হয় এবং নাস্তিকদের মাঝেও শত-সহস্র বিকৃত চিন্তার ফসল জন্ম নিচ্ছে, ফলে তারা ধর্মের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা শুরু করার সুযোগ পাচ্ছে।
বলা হয়, নাস্তিকরা ধর্ম এবং আল্লাহ মানে না। না মানাটা ধর্মান্ধদের চেয়ে শত-সহস্রগুণে ভালো। কারন, ধর্মের সঠিক জ্ঞান পেলে অবশ্যই তারা মানবে এবং মানতে বাধ্য। কিন্তু যারা না বুঝে, না জেনেই জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর করছে, কোরান-হাদিসের আক্ষরিক বিদ্যাকেই ধর্মজ্ঞান বলে বুঝাচ্ছে কোরানে তাদেরকে নির্বোধ বলছে। এরাই হয় অন্ধ-বধির এবং গোঁড়া মৌলবাদী-মোয়াহেদ কাফের। তারা সত্য হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে এবং সত্যটিকে দেখিয়ে দিলেও মানবে না। কারন, এরা অন্ধ-বধির বিধায় বোবা। অথচ কোরানের নির্দেশ হলো, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে তুমি অনুসরণ করো না (সুরা বনী ইসরাঈল- ৩৬ আয়াত)। কাজেই নাস্তিকদের জন্য পথ খোলা আছে। তারা মানে না, সত্য সঠিক জ্ঞান পেলে মানবে। এরা বাস করছে কালেমার প্রথমাংশ লা ইলাহার মাঝে। এর উর্ধ্বে আরোহণ করার সাধ্য তাদের নেই বিধায় নাস্তিক স্তরে আবদ্ধ আছে। যদি খোদাকে চিনতে পারে তবে অবশ্যই কালেমার দ্বিতীয় স্তরে ইল্লাল্লাহ-তে আরোহণ করে খোদাকে স্বীকার করে নিয়ে আস্তিকতায় স্থিত হবে। নেগেটিভ হতে পজেটিভে চলে এসে আল্লাহকে স্বীকার করে নিবে। আর যারা না জেনে না বুঝেই সব বুঝে গেছে এ ভাব ধরে আছে ঐ সমস্ত অন্ধদেরকে বুঝানো যাবে না এবং এরাই হলো ধর্মান্ধ গোঁড়া জঙ্গি মৌলবাদী। এর জন্য মৌলবীদের কোরান-হাদিসের আক্ষরিক ব্যাখ্যা গুলো দায়ী। যেমন, কোরানে প্রত্যেকটি আয়াতের একটি মুতাশাবেহাতুন (অষষবধমড়ৎরপধষ গবধহরহম) আরেকটি মুহকামাতুন অর্থ (ঊংঃধনষরংযবফ গবধহরহম) আছে। মুহকামাতুন বা গূঢ়ার্থ জানা হলে ধর্ম-বাণীর মূল হাকিকতটি পাওয়া যাবে। বকধার্মিকেরা ব্যাখ্যা করে তার বিপরীত অর্থ মানে আক্ষরিক। তারা ব্যাখ্যা করে কোরানের কিছু আয়াত হলো মুতাশাবেহাতুন এবং কিছু আয়াত হলো মুহকামাতুন। ফলে কোরানের আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আসলে একই আয়াতের মুতাশাবেহাতুন বা রূপকের পর্দা ভেদ করে কোরানের মুহকামাতুন বা সমুজ্জল বা গূঢ়ার্থ বের করলে তখনই হলো কোরান বুঝা এবং তা বর্তমানই পাওয়া যায়। এজন্যই মাওলানা রুমী রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলায়হি বলছেন – “আমি কোরানের মগজ (আসল অর্থ) উঠিয়ে নিয়েছি, আর হাড্ডী গোশত (রূপক কাঠামো) কুকুরের জন্য ফেলে রেখেছি”।