খলিলুর রহমান চিশতী
আমাদের সত্য সনাতন ইসলাম সার্বজনীন বা সমস্ত মানব জাতির জন্য মুক্তির বিধান। কারণ, ইসলাম মানে আমিত্বের কলুষ পরিহার করে মানবতা জাগ্রত করা তথা পরিপূর্ণ আতœসমর্পণ করা বা তথা লা মউতে স্থিত হওয়া বা চিরঞ্জীব জগতে অধিষ্ঠিত হওয়া বা অমরত্ব লাভ করা তথা ‘ওঁম শান্তি’। এ বিধান জ্বীন এবং ইনসানের জন্য প্রযোজ্য এবং জ্বীন ও ইনসানের জন্যই এবাদতের শর্ত। সে এক বিশেষ এবাদত যার দ্বারা লা- মউতে পৌঁছানো যায় তথা কেয়ামতের বাহিরে অবস্থান করা যায়। জ্বীন ইনসান ও আদম মূলত ঃ এক বিষয় নয়। এবাদতের ক্ষেত্রে জ্বীন ইনসান কথাটি আসবে। আর সমস্ত ফেরেশতাদের উপর হুকুম হলো আদমকে সেজদা করার জন্য বা আদমের প্রতি আত্মসমর্পণ করার জন্য। এ আত্মসমর্পনের আরবী হলো ‘ইসলাম’ আর আত্মসমর্পন কারীর আরবী হলো মুসলমান। কাজেই ইসলাম বা ওঁম শান্তি বা ¯্রষ্টাতে আত্মসমর্পন কোনো সীমাবদ্ধ জাতি গোত্রের বিষয় অবশ্যই নয়। ইহা পৃথিবীর মানব জাতির জন্য আল্লাহ বা ¯্রষ্টা প্রদত্ত বিধান বা ধর্ম। এ আল্লাহর বিধান মানতে হলে একজন পরকাল প্রাপ্ত মানুষ বা খান্নাসমুক্ত মানুষ এবং একজন চেতন মানুষের হাতে হাত রেখে বায়াত গ্রহন করে পরিপূর্ণ ইসলামে দাখিল হতে হবে। বায়াত গ্রহন ব্যতীত কোন এবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। তাই প্রত্যেক মানব জাতিরই একজন নায়েব নবীর নিকট বায়াত গ্রহন করাই হলো আল্লাহর বিধান।
এই পৃথিবীতে আল্লাহ্ অনেক নবী রাসূল ও অনেক ওলি, আউলিয়া প্রেরণ করেছেন। সকল মানব জাতির হেদায়তের জন্য ও প্রত্যেক নবী রাসূলের দেখানো পথ অনুসরন করার জন্য একজন নায়েব নবী বা একজন ইনসানুল কামেলের হাতে হাত দিয়ে বায়াত গ্রহন করতে হবে। তা না হলে কোন মতেই আল্লাহ্র দর্শন পাওয়া যাবে না।
মহান আল্লাহ্ পাকের বিধান হলো একজন পরকাল প্রাপ্ত চেতন মানুষ এবং জিন্দা মানুষ এলমে সিনার অধিকারী একজন পাক মানুষের হাতে হাত রেখে বায়াত গ্রহন করতে হবে। কারন আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, ব্যক্তি রাসূলের হাতে হাত দিয়ে বায়াত গ্রহন করলো, তার হাতের উপর আমার হাত থাকে। (সূরা ফাত্তাহ, আয়াত-১০)। কারন আল্লাহ্ বলেছেন, আল্লাহ্ ও রাসূলের মধ্যে প্রভেদ জ্ঞান করা যাবে না। করলে ভূল হবে এবং খাঁটি কাফের হয়ে যাবে। (সূরা নিসা আয়াত-১৫০-১৫১)।
আমরা জানি এই প্রথিবীতে যত বড় বড় সাধক, ফকির, ওলি- আউলিয়াগণ রয়েছে তারা সবাই কোন না কোন মুর্শিদের নিকট হাতে হাত রেখে বায়াত গ্রহন করেছেন। তাহলে কী সকল ইনসানুল কামেলগণ ভূল করেছেন? বাইয়াতের বিরুদ্ধের কথাগুলো হলো মুনাফেক মুয়াবিয়া এবং তাদের প্রেতাত্মা ও তার পোষা কুকুর মৌল্লা- মৌলভীগণের মুখের বানানো কিচ্ছা। কারন মুর্শিদ ব্যতীত কোন এবাদত আল্লাহ্র কাছে কবুল হবে না। যদি কোন ব্যক্তি একজন ইনসানুল কামেলের হাতে হাত ধরে বায়াত গ্রহন না করে তাহলে সে কোন দিন মুসলমান হতে পারবে না। মুসলমান শব্দের অর্থ হলো আত্মসমর্পন। এ আত্মসমর্পন করতে হলে একজন ইনসানুল কামেলের হাতে হাত ধরতে হবে। তা না হলে কোন দিন আল্লাহ্র দিদার লাভ করা যাবে না। একজন মুর্শীদ ব্যতীত কোন দিন আল্লাহ্র ভেদ জানা যাবে না। কারন খোদার হাদিদু এ সেফাতি নামের শব্দের অর্থই হলো মুর্শিদ (যা বর্তমান) আর তারাই হলো আত্ম পরিচয়ের অধিকারী ও লা মউতে অবস্থানকারী। কুরআনে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, যে ব্যক্তি রাসূলের অনুগত্য করল, সুতরাং অবশ্যই সে আল্লাহ্র অনুগত্য করলো (সূরা নিসা আয়াত-৮০)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল যে, আল্লাহ্র দিদার লাভ করতে হলে মুর্শিদের হাতে বায়াত হতে হবে। কারণ বলা হয়েছে, যার কোন মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ শয়তান। আর যারা বলে যে স্বপ্নে বায়াত হওয়া যায়, তাদের কোন মর্শিদ নেই। তার মানে বোঝা গেল, তাদের মুর্শিদ হলো ইবলিস। আর ইবলিসের বান্দা কখনো আল্লাহ্র বান্দা হতে পারে না। খাজা বাবা গরিবে নেওয়াজ (আঃ) হতে এরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি শায়েখ বা মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শক নেই তার কোন দ্বীন নেই। যার দ্বীন নেই তার কোন মারফতের এলাহি নেই। যার মারফতের এলাহি নেই তার সত্য পথের পথিক গণের সঙ্গে সংযোগ নেই। যার কোন শুভাকাঙ্খী নেই তার কোন মাওলা (প্রভু) নেই। অজ্ঞ মুর্খগণ এ কালামগুলোর ভেদ বুঝে না। শানে হাবিবুর রহমান কিতাবে ২০০ পৃষ্ঠা মুফতী আহম্মদ ইয়ার নাইমী “ইয়াও মানাদউ কুল্লালা ইনাসিন বিইমামহীন”যে দিন আমরা প্রত্যেক মানুষদেরকে তাতের ইমামসহ (নেতাসহ) ডাকবো, এ আয়াতের সূত্রে বলেন, মানলা শাইখা লান্ছ ফিস শায়খিশ শয়তান। যারা বায়াত গ্রহন করেনি তাদের কে হাশরের দিন শয়তানের দল হিসেবে ডাকা হবে। যেহেতু শয়তান হলো কাফের। আর যারা বাইয়াতে অবিশ্বাসী অর্থাৎ যাদের কোন মুর্শীদ নেই, আপনারাই বলুন তারা কোন দলের?
ওলী মুর্শিদের হাতে হাত দিয়ে তথা বাইয়াত গ্রহন করে তাঁর নিদের্শিত পথে চললেই আসবে কাঙ্খিত মুক্তি। নতুবা আবদ্ধই থাকতে হবে নফসানিয়াতের দোযখ যন্ত্রনায়। মুর্শিদ সকলের সহায় হোক।