প্রবন্ধ – ওহাবীবাদের উত্থান – আগ্রাসন চলছে মাজারসমূহে

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

মাজার ভাঙ্গার ইতিহাস নতুন নয়! শুরু থেকেই দ্বীন ইসলামের ওপর পরিচালিত হয়ে আসছে এহেন ধর্মনাশা তান্ডব!

রাসুলে পাক (সা) এর ওফাত পরবর্তী প্রকট হওয়া এজিদি ফিৎনার মূল লক্ষ্যবস্তুই ছিল ইসলামকে সারশূণ্য নিছক আচরণিক খোলসে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করে যাওয়া। তারই ধারাবাহিকতায় এজিদ কর্তৃক মদিনা আক্রমণ (আল হাররার যুদ্ধ) ও রাসুল পাক (সা) এর রঁওজা আক্রমণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই রাসুল (সা) ও আহলে বাইয়্যেত বিরোধী শিবিরের চক্রান্তের মূলে ছিল রাসুল (সা) ও আহলে বাইয়্যেত সহ দ্বীন ইসলামের ধারক বাহকদের মাজার বা রঁওজা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া।

১৭৪৪ সালের দিকে সউদ সরকার আরবের রাজ ক্ষমতায় অভিষিক্ত হলে অভিশপ্ত আব্দুল ওহাব নজদীর ইন্ধনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আরবব্যাপী মাজার ভাঙ্গার নারকীয় তান্ডব পরিচালিত হয়। পাক পাঞ্জাতনের সদস্য ও সাহাবী সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মাজার বা রঁওজা পাক মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকেই বিশ্বব্যপী ওহাবী অনুসারীদের মধ্যে মাজার ভাঙ্গার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করে।

পূর্বেও আমরা নানান সময়ে লক্ষ্য করেছি ভারতবর্ষ সহ পৃথীবির বিভিন্ন স্থানে ওহাবীদের দ্বারা ওলী-আউলিয়াদের মাজারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সাধিত হয়েছে। হামলা হয়েছে বড় বড় মাজারে। ওলী মুর্শিদের বিরোধিতা ও তাদের মাজার শরিফে হামলা তো ওহাবীদের বিশাল বড় গুরুদায়িত্ব!

বাংলাদেশ শুরু থেকে ধর্মীয় উদারতার দেশ। সাহাবীদের যুগ থেকে শুরু করে হাজার হাজার ওলী আউলিয়াগণ এদেশে এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। ওলী মুর্শিদদের দ্বারা ধর্ম প্রচারিত হওয়ায় এদেশের মানুষের ধর্মবোধ সহনশীল, উদার ও ধর্মীয় মরমীবোধ বা আধ্যাত্মিকতা দ্বারা সজ্জিত।

উনিশ শতকের শুরু থেকে বাংলাদেশে ওহাবীজম প্রচার লাভ করে। তারা বাহ্যিক ধর্মনিষ্ঠার লেবাছে আক্ষরিক ধর্মকানুন প্রবর্তনের দোহাই দিয়ে শুরু করে এদেশে দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি ওলী মুর্শিদদের বিরুদ্ধাচারণ। অলী আউলিয়াদের মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া তাদেরই মুভমেন্টের বড় অংশ।

বাংলাদেশের মানুষ আজো মরমী ইসলামের অনুসারী। ইসলামের আধ্যাত্মিক চেতনা ও সৌন্দর্য দ্বারা প্রভাবিত ও ধর্মের গুঢ় রহস্যাবলীর মর্মোদ্ধাকারী। এদেশে ইসলামের ভিত্তি বলে আমরা ওলী আউলিয়াদেরকেই জানি। নব্য আমদানিকৃত কোনো অনৈসলামিক মুভমেন্ট এদেশের মানুষের ধর্মবিশ্বাসে ফাটল ধরাতে পারবে না।

আজো বাংলাদেশের কোটি মানুষ আধ্যাত্মচেতনার চর্চাকারী। কোটি মানুষ ওলী মুর্শিদদের অনুসারী। মাজার ভক্ত। মাজারে তাজীম করে। ওলী আউলিয়াদের প্রতি অকৃত্তিম শ্রদ্ধা ও ভক্তি পোষণ করে। অন্তঃসারশূণ্য ওহাবী মতবাদের উগ্রতা ও হিংস্রতা কখনোই বাঙালী চেতনামানসে স্থান করে নিতে পারবে না। বরং ওহাবীজম বাংলার ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য আবর্জনার স্তুপ হয়েই থাকবে।

যারা ওলী আউলিয়াদের মাজার বা পবিত্র রঁওযা মুবারকে আক্রমণ করছেন, তাদেরকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, মাজার ভেঙ্গে কখনোই মাজারের প্রতি ভক্তদের হৃদয়সারিত অমোঘ ভক্তির স্রোতকে আটকে দেয়া যাবে না। বরং দিন দিন অলী আউলিয়াদের আধ্যাত্মিক শক্তির দূর্বার টানে দলে দলে মানুষ জমায়েত হবে মাজারে, ভক্তি অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য। আজ যে মাজারটি ভেঙ্গে দেয়া হলো,, কাল সেটি আরো শান শওকতের মধ্য দিয়ে আরো সুন্দর রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে। ওলী আউলিয়াগণ চিরকালই শাশ্বত সত্যের অনির্বাণ দীপ্তি প্রকাশ করবে বাংলার প্রতিটি কোণায় কোণায়, প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে।

প্রতিটি অলী আউলিয়ার মাজার বা রঁওজা মোবারক আমাদের প্রাণের স্পন্দন। আমাদের ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু। আপন আপন বুক পেতে দিয়ে আমরা প্রতিটি মাজারকে আগলে রাখবো। ওহাবী উগ্রতার ক্ষত বরং আমাদেরকে প্রাণিত করবে আগামীর সত্য-সংগ্রামের পথে। ন্যায় সাধনার পথে। আপন চিত্তকে উৎকর্ষতার সীমায় নিয়ে আমরা প্রমাণ করবো, এ দেশ ওলীদের, এ চেতনা সুফিদের, এ সংগ্রাম অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের।

জয় হোক ওলী মুর্শিদের। জয় হোক আধ্যাত্মিকতার।

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর পত্রিকা
১২|০৮|২০২৪

আপন খবর