রেফারেন্স – ওহাবী সালাফী দেওবন্দীদের ভ্রান্ত মতবাদসমূহ

সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

ধর্মনাশের এক বিচিত্র মহড়ার নাম ওহাবী -সালাফিবাদ। ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এর কবলে পড়া এক ঔপনিবেশিক দখলদারীমূলক শাসনব্যাবস্থার নাম ওহাবী তন্ত্র। যা দ্বীন ইসলামকে সমূলে উৎপাটিত করে ইসলামী দেশসমূহে ইঙ্গ-মার্কিনী আধিপত্য বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। সৌদি-মার্কিন প্রেট্রোডলারের অপরাজনীতির শিকার আজ পুরো আরব বিশ্ব। ইংরেজদের অনুচর ওহাব নজদী ও সরদার সউদ মিলে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ইঙ্গ-মার্কিন সহায়তায় আরবে আমদানি করে ওহাবী বাদ। যা মূলত ইংরেজদের সাজানো এক ধর্মবিনাশের অপকৌশল সমূহের সমাহার।

সেই অপকৌলশসমূহকে সৌদিতে সফল ভাবে প্রয়োগ করেন আব্দুল ওহাব নজদী ও সরদার সউদ। ধীরে ধীরে সে অপকৌশল ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইসলামী বিশ্বে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেও বেশ কিছু লেবাছধারী ভন্ডদের দ্বারা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিকৃত ও ধিকৃত সে জঘন্য মতবাদ সমূহ। সে মতবাদ সমূহ বিচিত্র নামধারন করে আমাদের মাঝে প্রচারিত হচ্ছে। কখনো তারা নাম ধারন করে ওহাবী বাদ, কখনো সালাফীবাদ, কখনো দেওবন্দীবাদ, কখনো আহলে হাদীস। বিচিত্র তাদের নামের সমাহার! সকল নামের আড়ালেই তারা মূলত প্রচার করে ইঙ্গ-মার্কিনীদের দ্বারা সাজানো ওহাব নজদীর ধর্মবিনাশের মতবাদগুলো। যে মতবাদ মানলে প্রতিটি মানুষ বিচ্যূত হবে ধর্ম থেকে।

সঠিক ধর্মজীবন গঠন করতে চাইলে আমাদেরকে সেই জঘন্য মতবাদ গুলো চিনতে হবে যাতে আমরা দাজ্জালচক্রের ফাঁদে পা না দেই। তারা বাহারী সুরতের আড়ালে আমাদের ধর্মকে নাশ করতে বদ্ধপরিকর। তাদের মতবাদগুলো এতটাই জঘণ্য যে, আপনার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সৌদি ভন্ডদের অনুচর দের প্রদত্ত কিছু ধর্মবিরোধী ফতোয়া। যারা আমাদের দেশে আমাদের বিশ্বাস কে নষ্ট করতে চায় তাদের কিছু মতবাদ জেনে নেওয়া যাক…

দেওবন্দি তাবলীগী দের বা ওহাবী দের কতিপয় ভ্রান্ত মতবাদ :

১. হুজুর কি তাজিম বড়ে ভাইকে বরাবর করনা চাহিয়ে, কেউনকর আপহি বিহি ইনছান হেয়। অর্থাৎ- হুজুর নবী করিম (সা) এর সম্মান বড় ভাইয়ের মতো করা উচিত কেননা তিনিও মানুষ। (৪৮পৃঃ তাকবিয়াতুল ঈমান, ইসমাইল দেহলভী)

২. জেছকা নাম মুহাম্মদ ইয়া আলী হেয় ও কেছি চিজকা মালেক ও মোখতার নেহি। অর্থাৎ- যার নাম মুহাম্মদ অথবা আলী তার কোনো কিছুর মালিকানা বা এখতিয়ার নেই। (তাকভিয়াতুল ইমান ৩২পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৩. রওজায়ে মাতহারা ফকত জিয়ারত কে লিয়ে সফর কারনা শিরিক হেয়। অর্থাৎ- শুধু (নবী করিম (সা) এর) পবিত্র রওজা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শিরক। (তাকবিয়াতুল ঈমান, ইছমাইল দেহলভী)

৪. লফজে রাহমাতুল্লিল আলামিন সিফতে খাচ্ছায়ে রাছুলুল্লাহ নেহি হেয়। অর্থাৎ- কুরআনের শব্দ রাহমাতুল্লিল আলামিন রাছুলুল্লাহর জন্য খাছ (নির্দিষ্ট) নয়। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, ২য় খন্ড ৪০০পৃ)

৫. আফআলে কাবিহা মাকদুরে বারীতায়ালা হেয়। অর্থাৎ- যাবতীয় দোষণীয় খারাপ কাজগুলো আল্লাহ তায়ালার শক্তি ক্ষমতার আওতাভুক্ত। (জেহাদুল মুকিল ১ম খন্ড ৭৭পৃ, মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি)

৬. ইমকানে কিজবছে মুরাদ দুখুলে কিজব তাহাতে কুদরতে বারি তায়ালা হেয়। অর্থাৎ- মিথ্যা বলতে পারে এর মর্ম হলো মিথ্যা আল্লাহ তায়ালার শক্তি ক্ষমতার অধিকারে নিহিত অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা বলার শক্তিতে শক্তিবান। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি)

৭. হুজুর (সা) এর রঁওজা দেখা এমন পাপ যেমন মুর্তি দেখা। (কিতাবুত তাওহিদ, আব্দুল ওহাব নজদী)

৮. ছোট বড় সকল সৃষ্টিই আল্লাহর শাণের সামনে চামার অপেক্ষা নিকৃষ্ট। (তাকবিয়াতুল ঈমান ৪৪পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৯. যদি নবী মোহাম্মদের পরে অন্য কোন নবী জন্মগ্রহন করেন, তবুও খাতামিয়াতে মোহাম্মদীর অর্থ নবী শব্দের মধ্যে শেষ নবী হওয়াতে কোনো প্রভেদ দেখা দিবে না। (তাহজিরুন্নাছ, কাশেম নানুতুবি দেওবন্দি)

১০. নবীর এলেমের চেয়ে শয়তানের এলেম বেশি। (বারাহেনে কাতেয়া, খলিল আহমদ আম্বেটি দেওবন্দি)

১১. নবী (সা) এর নিকট নিজের পরিনতি ও দেয়ালের পেছনের জ্ঞানও নেই। (বারাহিনে কাতেয়া ৫১পৃ, খলিল আহমদ আম্বেটি দেওবন্দি)

১২. নামাজে হযরত (সা) এর প্রতি খেয়াল করা স্বীয় গরু গাধার খেয়ালে নিমগ্ন হওয়া অপেক্ষা নিকৃষ্টতর। (সিরাতে মুস্তাকিম, ইসমাইল দেহলভী)

১৩. গায়েব কি বাতি আল্লাহ হি জান্তা হেয়, রাছুলুকু কিয়া খবর? অর্থাৎ- গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহই জানেন, গায়েব সম্পর্কে রাছুলের কোনো খবর নেই। (তাকবিয়াতুল ঈমান ৪৮পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

১৪. এভাবে গায়েবী বিষয় নিজ এখতিয়ারে যে যখন ইচ্ছা করেন জেনে নেন। ইহা আল্লাহ সাহেবেরই শান। অর্থাৎ আল্লাহ সব সময় গায়েব জানেন না। (তাকবিয়াতুল ঈমান ৩২পৃৃ, ইসমাইল দেহলভী)

১৫. হযরত নবী করীম (সা) এর সাহাবাগণকে কাফের বললেও সুন্নি থাকে। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া ২য় খন্ড ১৪১পৃ, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী)

১৬. কাকের মাংস খাওয়া হালাল। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া ২য় খন্ড ১৩০পৃ, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী)

১৭. রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী কে আব্দুল ওহাব নজদী সম্পর্কে জিঙ্গাসা করা হলে জবাব দেন, বর্তমানে দ্বীনদার ও সুন্নতের অনুসারিদেরকে ওহাবি বলে। মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী-কে মানুষ ওহাবি বলে, বাস্তবে তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া ৩ খন্ড ৭১পৃ)

১৮. ইলিয়াসের তাবলীগ পন্থীরাই একমাত্র মুসলমান যারা তবলীগ নিজে করে এবং অন্যকে করতে উৎসাহিত করে, এছাড়া আর কোনো মুসলমান নেই। (মলফুজাত ৪৬পৃ)

১৯. তবলীগ জামাতের চিল্লা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (মলফুজাত ৬৭,৬৮,১২৩পৃ)

২০. হাদিয়ার দরজা ফরজ জাকাত হইতে বহুস্থলে বেশি। (মলফুজাত ৪৭পৃ)

২১. দেওবন্দি শিক্ষা ও দাওয়াতে দ্বীনের শিক্ষা ছাড়া আর সকল শিক্ষাই বাতিল। (মলফুজাত ৫১পৃ)

২২. আমি আল্লাহর কুদরতি হাত ধরে মুরিদ হয়েছি। আল্লাহ আমাকে স্বপ্নের মাধ্যমে বলেছেন, মুহাম্মদী ইসলাম ধ্বংস হয়ে গেছে, তুমি নতুন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করো। ( ইলিয়াছ মেওয়াতি, মলফুজাত)

২৩. আমি উত্তরাধিকার সুত্রে নবুয়্যতের তোহফা প্রাপ্ত হয়েছি। (ইলিয়াছ মেওয়াতি, মলফুজাত ১২৫পৃ)

২৪. নবী করিম (সা) এর দ্বারা যে কাজ সমাধা হয় নাই, তাবলীগীদের দ্বারা তার চাইতেও গুরুত্বপুর্ন কাজ সমাধা হইতে পারে। (মাকাতিবে ইলিয়াছ ১০৭পৃ ও তাবলীগ দর্পন ৬৩পৃ)

২৫. আল্লাহ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন সম্পন্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ জানতে পারেন। (তাফসির-ই বুলগাতুল হায়রান ১৫৭,১৫৮পৃ, হুসাইন আলি দেওবন্দি)

২৬. হুজুর (সা) আল্লাহ তেমনি জ্ঞান দান করেছেন যেমন জ্ঞান জানোয়ার, পাগল এবং শিশুদেরও রয়েছে। (হিফজুল ঈমান ৭পৃ, আশরাফ আলি থানভী দেওবন্দি)

২৭. হুজুর (সা) দেওবন্দ আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দু শিখতে পেরেছেন। (বারাহিনে কাতেয়া ২৬পৃ, খলিল আহমদ আম্বেটি)

২৮. আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলে হুজুর (সা) এর সমকক্ষ কোটি-কোটি পয়দা করতে পারেন। (তাকভিয়াতুল ঈমান ১৬পৃ, ইসমাইল দেহলভী দেওবন্দি)

২৯. হুজুর (সা) মৃত্যুবরন করে মাটিতে মিশে গেছেন। (তাকভীয়াতুল ঈমান ৫৯পৃ, ইসমাইল দেহলভী দেওবন্দি)

৩০. নবী রাছুল সবাই অকেজো। (তাকভিয়াতুল ঈমান ২৯পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৩১. নবীর প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মাসুম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। (তাসফিয়াতুল আকাঈদ ২৫পৃ, কাশেম নানুতুবি)

৩২. নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই করো বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত। (তাকভিয়াতুল ঈমান ৬১পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৩৩. বড় অর্থাৎ নবী (সা) ও ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ। (তাকভিয়াতুল ঈমান ৩পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৩৪. নবী (সা) কে তাগুত বা শয়তান বলা জায়েজ। (তাফসির-ই বুলগাতুল হায়রান ৪৩পৃ, হুসাইন আলি দেওবন্দি)

৩৫. নবী (সা) এর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরি ও জমিদারের মতো। (তাকভিয়াতুল ঈমান ৬১পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৩৬. উম্মত বাহ্যিক ভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়। (তাহযীরুন্নাছ ৫পৃ, কাশেম নানুতুবী)

৩৭. দেওবন্দি আলেমরা হুযুর (সা) কে পুলসিরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। (তাফসির-ই বুলাগাতুল হায়রান ৮পৃ, হুসাইন আলি দেওবন্দি)

৩৮. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আশরাফ আলি রাসুলুল্লাহ আর আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা আশরাফ আলি বলার মধ্যে সান্তনা রয়েছে, কোনো ক্ষতি নেই। (রিসালায়ে ইমদাদ ৩৫পৃ, সফর ১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা)

৩৯. মিলাদুন্নবী উদযাপন করা তেমনি যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে। (বারাহিনে কাতেয়া ১৪৮পৃ, ফাতোয়ায়ে মিলাদ শরীফ ৮পৃ)

৪০. রাসুল (সা) চাইলে কিছুই হয়না। (তাকভিয়াতুল ঈমান ৫৬পৃ, ইসমাইল দেহলভী)

৪১. আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও অলী একটা নাপাক ফোটা অপেক্ষাও নিকৃষ্ট। (তাকভীয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ৫৬)

৪২. নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত। (বারাহিনে কাতেয়া ৩পৃ, খলিলুর রহমান দেওবন্দী)

৪৩. নবী ও অলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনেও উকিল ও সুপারিশকারী মনে করে এমন মুসলমান সাহায্যের জন্য আহ্বানকারী মুসলমান ও নযর নিয়াযকারী মুসলমান, আর কাফির আবু জাহেল শির্কের মধ্যে সমান। (তাকভিয়াতুল ঈমান পৃ ৭,২৭, ইসমাইল দেহলভী)

৪৪. দরুদ এ তাজ অপছন্দনীয় ও পাঠ করা নিষেধ। (ফাযাইলে দরুদ শরীফ পৃ ৯২, ফাযাইলে আমাল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে পৃথীকৃত)

৪৫. ওরস শরীফ, খতম শরীফ, চেহলামের ফাতেহাখানি, ঈসালে সওয়াব সবই নাযায়েজ ও ভুল প্রথা, বিদয়াত, কাফের প্রথা। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি)

৪৬. প্রসিদ্ধ কাক খাওয়া সওয়াব। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি)

৪৭. হিন্দুদের হোলি দেওয়ালির প্রসাদ ইত্যাদি জায়েজ। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি)

৪৮. হিন্দুদের সুদি টাকায় উপার্জিত অর্থে কুপ বা নলকুপের পানি পান করা জায়েজ। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি)

আমাদের সাবধান থাকতে হবে যেনো ঈমান বিধ্বংসী দাজ্জাল চক্র তথা ওহাবী চক্র আমাদের ঈমানকে নষ্ট না করতে পারে। ওহাবী মতবাদ যেনো আমাদের মস্তিষ্ককে কলূষিত করতে না পারে। প্রভু সকলের সহায় হোন।

সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর