লেখক – মুফতি নূর-এ-আলম চিশতী
মহান আল্লাহ তায়ালা মানষ সৃষ্টির পূর্বে জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর জাত পাক প্রকাশের জন্য, প্রেমের জন্য, তাঁর ইবাদতের জন্য। কিন্তু সেই প্রেম তাঁর মনমতো হয়নি বিধায়, মানুষ সৃষ্টির ইরাদা করলেন, মানুষের মাধ্যমে তাঁর জাত পাক প্রকাশ করবেন। তাই তিনি ফেরেশতাদের কাছে মানুষ সৃষ্টির কথা তুলে ধরলেন, ফেরেশতারা মানুষ সৃষ্টির বিরোধিতা করে বললেন, বনী আদম পৃথীবিতে মারামারী খুন-খারাবী করবে, তাই মানুষ সৃষ্টির কোন প্রয়োজন নাই। বরং আমরাই তো আপনার প্রসংশায় তাসবীহ ও পবিত্রতা ঘোষনা করি। আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। (বাকারা ৩০)
এখন বোঝা দরকার, জ্বীন জাতির মাধ্যমে আল্লাহর সেই প্রেম প্রকাশ পায়নি বিধায় আল্লাহ মানব জাতিকে তাঁর জাত পাক প্রকাশের জন্য সৃষ্টি করলেন।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করা মানুষের একটি স্বভাবগত অভ্যাস। তাই তাদেরই মধ্যে থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদেরকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে পরিক্ষা করার জন্য সঙ্গে দিয়েছেন শয়তান, ভালো মন্দ যাচাই করার জন্য। কথায় বলে ঘরের চোরে চুরি করলে ধরা মুশকিল, আসলে তাই। অন্যান্য ধর্মের লোক ইসলামের যতটুকু ক্ষতি করেছে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে মুসলমান নামধারী মৌলবাদ। অবশ্য এদেরকে সহজে চেনাও মুশকিল। তবে সত্যকে প্রকাশ করাই মুসলমানদের কাজ, চেপে রাখা মুনাফিকের লক্ষন।
যে ইসলামের আলোক আভায় বিশ্বজগত উজ্জল হয়ে উঠেছিলো, মরুর তৃষাতুর বালুকা রাশি রহমতের বারিধারায় সিক্ত হয়েছিলো, নিষ্প্রান মরুর ধুলায় সবুজের অংকুর উঠেছিলো, যার আগমনে যুলুম ও অত্যাচারের প্রাসাদ ঝরঝর করে ধ্বসে পড়েছিলো, নিপিড়িত মানবজাতি মুক্তির মুকুট পেয়েছিলো, সে ইসলাম ও তার রাসুলকে নিয়ে চলছে অসংখ্য পায়তারা। কখনো বিধর্মী ও কখনো মুখোশধারী মৌলবাদদের দ্বারা যুগে যুগে ইসলাম বহু আক্রান্ত হয়েছে। এ সমস্ত মুসলমানদের চেনা সহজ, আবার কঠিন।
এরা পৃথিবীর কানায় কানায় এমনভাবে ছড়িয়ে আছে, এক শ্রেনীর লোক তাদেরকে বুজুর্গ হিসেবে ভক্তিও করে। বাহ্যিক ভাবে এদেরকে দেখলে মনে হয় এরা পাক্কা মুসলমান। কিন্তু এরা আকিদা গত ভাবে ধর্মের মধ্যে গোড়ামী সৃষ্টি করে যাচ্ছে, এরা ইসলাম বিরোধী মৌলবাদ।
একপাল ছাগলের মধ্যে দুটো ক্ষুধার্ত দুটি বাঘ ছেড়ে দিলে ছাগল পালের জন্য যেমন মারাত্মক ঠিক তেমনি ইসলাম ধর্মের জন্য এরাও মারাত্মক।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে বিধর্মী শত্রুরা ইসলামের যতটুকু ক্ষতি সাধন করতে পারেনি, তার চেয়েও অধিক ক্ষতি সাধন করেছে নামধারী মুসলমান মৌলবাদ সমাজ। এরা নামধারী আলেম সেজে, কয়টা আরবী বই পড়ে সমাজের সরলমনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছে গোড়ামী, ফতোয়া যা ধর্মের মধ্যে নাই। তারা লম্বা দাড়ি, লম্বা টুপি, জুব্বা, পাগড়ী পড়ে সমাজগুলো ধ্বংস করতে চলেছে। এর মৌলবী রুপী শয়তান। আর মানুষ এখন মৌলবী পোশাক টাকে এত মূল্যবান মনে করছে যে, এ পোষাকটা পড়লেই আলেম! আলেম সাহেব যা বলে কোরআন হাদীস থেকেই বলে! আলেম সাহেব কি আর মিথ্যা বলতে পারে! হায়রে সমাজ!
মৌলবীরা রূপকের বিশ্বাসী, রূপকের আড়ালে যে সত্য তথা বাস্তবতা লুকায়িত আছে তারা তা বিশ্বাস করতে চায় না। মানুষকে বিশ্বাস করতে চায় না। দেয় শুধূ ফতোয়া।
পবিত্র কালামে আল্লাহ বলেন, ধর্মের মধ্যে কোনো জোর জবরদস্তি নাই। (বাকারা ২৫৬)
রাসুল (সা) এর কালাম হলো- আল ইসলামু দ্বীনুল ফিৎরাত অর্থাৎ ইসলাম হলো স্বভাবগত ধর্ম।
মানুষ কে নামাজের কথা বলে- নামাজ পড়ো। চুরির কাজ চুরি করবে, নামাজের কাজ নামাজ করবে। অথচ কোরানে বলা হয়েছে নামাজ সমস্ত অশ্লীল ও ঘৃনিত কাজ হতে বিরত রাখে। (আনকাবুত ৪৫) । কই, এরা তো নামাজও পড়ে, নামাজের দাওয়াতও দেয়, তবুও তো মৌলবীদের স্বভাব পরিবর্তন হয়না! যতসব অশ্লীল কাজ আছে, খুন থেকে শুরু করে সব ধরনের ঘৃনিত কাজে এরা জড়িত। এরা আবার আলেম! মৌলবীরা ধর্ম জ্ঞান বুঝে না।
নামাজের কাজ বা গুণ হলো মুসল্লির সৎ স্বভাবগুলো ফুটিয়ে তোলা। আর খারাপ স্বভাব গুলো পরিহার করা।
রাসুল (সা) একদিন দেখলেন, তার কিছু সাহাবী দাজ্জাল সম্পর্কে আলোকপাত করছে। রাসুল (সা) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমারা কি সম্পর্কে আলোচনা করছিলে? সাহাবা গণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) আমরা দাজ্জালের ভয়ে ভীত সন্ত্রন্ত হয়ে গেলাম। রাসুল (সা) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর কিছু বলবো না? সাহাবা গন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) বলুন। তখন রাসুল (সা) বললেন, মানুষকে দেখানোর জন্য যারা নামাজ আদায় করে তারা দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর।
হাদিস – হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নামাজ রোজা এবং সদকার চেয়েও উত্তম সমাজে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কারন সমাজে সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়া মানেই দ্বীন ধ্বংস হওয়া। (হাদিস)
একদল মৌলবী সাহেবগন কালেমা নামাজ রোজা হজ্জ এবং যাকাতে শুধু আনুষ্ঠানিকতা আদায় করছে তারা কেবল খোসাটি নিয়েই ব্যস্ত আছেন। বিধায় এ ধরনের বন্দেগী তে মানব মুক্তি মোটেই মিলবে না। বরং জাহান্নামী হতে হবে। (সুরা মাউন) তাদের ধারনা শুধু নামাজ রোজা ইত্যাদি বাহ্যিকভাবে বা আনুষ্ঠানিক ভাবে বা ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করে গেলেই পার পেয়ে যাবে। আসলে এরা নামাজ কি জিনিস মোটেই বুঝেনি। বুঝলে এ ধরনের কথা মোটেই বলতে পারতো না। এরা পারে ফতোয়া দিয়ে ধর্মে গোড়ামী সৃষ্টি করতে।
আমিত্বকে দীলে ধারণ করে বা নফসে আম্মরাতে আশ্রয় নিয়ে যতো নামাজ রোযাই করা হোক না কেনো তার মুক্তি কম্মিনকালেও মিলবে না।