লেখক – মুফতি নূর-এ-আলম চিশতী
পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও অর্থাৎ ইসলামকে ধারণ করো। (বাকারা ১৩৮)
এখন মৌলবাদী সমাজ গুলো এসব মানতে চায় না, মানে না।
ইসলাম নিছক কোনো পোষাক, দাড়ী, জুব্বা, বেশ ভূষা দিয়ে হয় না। মানুষ স্বভাবে সুন্দর, চেহারায় সুন্দর হয় না।ধর্ম চেহারা দেখে না, স্বভাব দেখে।
মুসলিম ও বোখারী শরীফের হাদীস, আল্লাহ তোমাদের বেশ ভূষন ধন সম্পদ দেখে না, বরং দেখে তোমাদের অন্তর ও উদ্দেশ্যের দিকে।
আরো বলা হয়েছে, তাখাল্লাকু বি আখলাকিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর গুনে গুনান্বিত হও।
শুধু লম্বা জুব্বা, ঢিলা কুলুপ দ্বারা আলেম সাজা যায়, আলেম হওয়া যায় না। আরবী পড়তে শিখে তাফসীর করে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধাচারন করলে তাকে আলেম বলে, এই কথায় যারা বিশ্বাসী, তাদের মাথায় মগজ বলতে কিছুই নাই।
চৈতন্য জ্ঞানের অধিকারী হলে সে হয় আলেম, আর এ জ্ঞান না থাকলে হবে মৌলবাদ।
আলেমের মধ্যে থাকবে আল্লাহর স্বভাব। তারা মাদ্রাসা স্কুল কলেজে পড়ুক আর নাই পড়ুক তারা আলেম।
মৌলবীগন মসজিদে মসজিদে চাকরী নিয়ে নামাজ পড়ানোর নামে গ্রাম বা মহল্লার মানুষকে তাদের মতবাদে দীক্ষিত করে মগজ ধোলাইর মাধ্যমে ঈমান ধ্বংস করে চলেছে। ইসলামের তাবলীগের নামে গ্রাম গঞ্জে গাট্টি মাথায় নিয়ে মৌলবী ইলিয়াছের স্বপ্ন কে বাস্তবায়ন করছে, এরা জঙ্গী মৌলবাদ। এদের সম্পর্কে জানার জন্য “পরহেজগারীর আড়ালে ওরা কারা” বইটি পড়ুন।
কারবালার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। রাসুল (সা) এর দৌহিত্র , মাওলা আলী (আ) এর কলিজার টুকরা, মা ফাতেমা এর নয়নের মনি, আহলে বাইয়াতের সদস্য ইমাম হোসাইন (আ) তৎকালীন যুগের নামধারী মুসলমান তথা মৌলবাদদেরকে লক্ষ্য করে ফোরাত নদীর তীরে হাজার হাজার মুফতি মুফাসসির হাফেজ মাওলানাদেরকে বলেছিলেন, আলাইছা ফি মুসলিমুন? অর্থ- তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নাই? অথচ বর্তমান আলেম সমাজের চেয়ে তাদের কুরআন কিতাবের জ্ঞান, পোষাকের বাহার কম ছিল না। ইমাম হোসাইন (আ) মৌলবাদ দেরকে চিহ্নিত করে দেখাইয়া গেলেন, এরা নামধারী মুসলমান মৌলবাদ যার স্থান ধর্মের মধ্যে নাই। তারা লম্পট ইয়াজিদের চেলা চামুন্ডা টাকার গোলাম ছিল বিধায় ফতোয়া দিয়েছিলেন ইমাম হোসাইন (আ) এর শির মোবারক নিয়ে তারাতারি কেটে নিয়ে আয়, আসরের নামাজ যেন কাজা না হয়! হায়রে ইসলাম দরদী! যারা ইসলামের কর্ণধার তাদের বিরুদ্ধাচরন করে আবার নামাজের দাবি করে! এরা কেমন মুসল্লী বোঝা দরকার।এদেরকে কোরানে বধির, বোবা ও অন্ধ বলা হয়েছে। (বাকারা ১৮)
তাই জগৎ বিখ্যাত মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (র) এদের গোড়ামীর কারনে এদেরকে কুকুরের সাথে তুলনা করে তার মসনবী শরীফে বলেছেন, আমি কুরআনের মগজ (আসল অর্থ) উঠিয়ে নিয়েছি আর হাড্ডি গোশত (রূপক কাঠামো) কুকুরের জন্য ফেলে রেখেছি।
কারন মৌলবীদের মাঝে তিনি কুকুরের স্বভাব দেখেছেন। এরা কোরানের রূপকের অর্থ করে এবং রূপককেই ধর্ম জ্ঞান বুঝায়। তাই এদেরকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এই স্বভাব থাকা কালীন তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবে না। মৌলবী স্বভাব ছেড়ে দিয়ে একজন জ্ঞানীর সংস্পর্শ ছাড়া মানুষ হওয়া যায় না। এটা মৌলবী সমাজ বুঝতে চায় না, সাধারন মানুষকেও বুঝতে দেয়না। এরা রুপকে বিশ্বাসী, ইসলাম যে যুগে যুগে বর্তমান, এদের মগজে তা ধরে না।
একজন জ্ঞানীর সঙ্গে থাকলে ধর্ম জ্ঞান বুঝা যায়, জানা যায় এবং দেখা যায়। তাই আমার প্রান প্রিয় মুর্শিদ কেবলা কাজী বেনজীর হক আল চিশতী নিজামী (কুঃ ছেঃ) বধিরদেরকে লক্ষ্য করে তার কালামে লিখেছেন,
“বেদ কোরান আর বাইবেল গীতা, সকলের মুল মুর্শিদ তোমার
ভজন করো তাররে মন ভজন করো তার।”
অর্থাৎ কোরআন হাদীস বাইবেল গীতা যত ধর্ম গ্রন্থ আছে, যত বড় পন্ডিত হও না কেনো বুঝতে পারবে না যদি একজন জ্ঞানী তোমাকে বুঝিয়ে না দেয়।
তাই মহান আল্লাহ তায়ালা তার কালামের মধ্যে বলেছেন, হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করো আর একজন সাদেকিন বান্দার সঙ্গী হয়ে যাও। (তওবা ১১৯)
অর্থাৎ যারা সত্য ধারন কারী, আল্লাহ প্রাপ্ত, চৈতন্য জ্ঞানের অধিকারী, তাদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন, তাদের সাথে থাকলে ধর্ম জ্ঞান বুঝা যায়, জানা যায়।
ধর্ম জ্ঞান না বুঝে নিজেরাই আলেম সেজে যারা সমাজগুলোকে পথভ্রষ্ট করছে তারাই আসল মৌলবাদ।
এরা লেবাছ পড়া শয়তান, এদের কাছ থেকে আমাদের দুরে থাকতে হবে।তাই আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতে বলেছেন, সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে।আর নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হবারই ছিল।
সত্য আগমনে মিথ্যা তিরোহিত হবে, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নাই।
যারা দ্বীনে মোহাম্মদীর মধ্যে দাখিল হবে তাদের মধ্যে মৌলবাদ স্বভাব থাকবে না। তারা হয়ে যাবে সত্যিকারের মানুষ।তাদের মধ্যে থাকবে প্রেম ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি তারা ভালোবাসায় আবদ্ধ থাকবে, শান্তিতে থাকবে, শান্তিতে বসবাস করবে। আর মৌলবাদদের কাজ সমাজে গোড়ামী সৃষ্টি করা, মানুষের মধ্যে পশুর স্বভাব সৃষ্টি করা, এরা শয়তানের বান্দা, তারা নিজেরাই শয়তান হয়ে গেছে। রমজানের রোজাতে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ করার জন্য মিছিল করে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলেই ঈমানদারদের ঈমান হেফাজতে থাকবে।