পত্রিকা – যাদের কোনো ধর্ম নেই – ৪র্থ সংখ্যা ৩য় পর্ব

হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী

এতে জেনার একটা পথ খুলে দেয়া হয়েছে। জোর করে বা মতের বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া আর জেনা করতে বাধ্য করা একই কথা। অথচ ইসলাম মেয়েদেরকে স্বামী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে। কোরান বলছে – এবং তাদের (নারীদের) জন্যও তেমনই ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে যেমন রয়েছে পুরুষদের, এবং নারীদের উপর রয়েছে পুরুষের মর্যাদা (সুরা বাকারা-২২৮)। আর ধর্মকর্ম, এ ব্যাপারেও ইসলামে কোনো কঠোরতা বা বাড়াবাড়ি অবলম্বন করা হয়নি (সুরা হাজ্জ-৭৮)। অথচ নারীদের ব্যাপারে তাও করা হচ্ছে। ইসলামে চারটি বিবাহ করা জায়েজ এবং চার স্ত্রীর মধ্যে অবশ্যই সমতা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কোরানে। তার হাকিকত কি আলেম-মোল্লারা একটু বুঝিয়ে দিলেই পারে? তাদের ধান্ধাবাজিটাও ধরা পড়ে যাবে। কারণ, এ অন্ধগণ ইসলামের হাকিকত বুঝেনি, বুঝেছে আক্ষরিক অর্থে বিধায় মতভেদের আস্তাকূড়ে নিক্ষেপ করছে নিজেদেরকে এবং সাধারণ মানুষকে। মানব দেহে পাঁচটি নফস আছে। কুমতি নফসে আম্মারা জিনার সাক্ষি বাকি চার নফস। সেই চার নফসের অধিকারী হওয়াই বিবাহিত চার স্ত্রী ইহাই কোরানের মুহকামাত। কোরানের মোতাশাবেহাত হতে মুহকামাত বের করে আনলেই কোরান সার্বজনীন বলে জানা যায়, বুঝা যায় এবং সব মানুষই মানতে বাধ্য, যেহেতু ইহা প্রত্যেকেরই কথা। বহু মতভেদের বেড়াজাল হতে বের হলেই তাওহীদ জ্ঞানের সন্ধান লাভ হয়। আর মানুষতত্ত্বই তাওহীদতত্ত্ব, তাওহীদতত্ত্বই জ্ঞানের ভান্ডার। সেই তাওহীদ জ্ঞানই কোরানের মুহকামাত।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী “দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা”- এর প্রধান ধর্মান্ধ ওহাবী মৌলবী আহামদ শফী। এ মৌলবী আহামদ শফী ৯৩ বৎসর বয়সে নারীদেরকে নিয়ে আবিষ্কার করলো “তেতুলতত্ত্ব”। নারীরা নাকি তেতুলের মতো, নারীদেরকে দেখে যাদের জিব্বায় লালা আসে না তারা নাকি দাউস (হিজড়া) এবং ধ্বজভঙ্গ রোগী। তার এ ধরণের বয়ানগুলো সচেতন সভ্য মানুষের বিবেচনায় অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নোংরা, কুৎসিত, অশালীন, নারীবিদ্বেষী, নারীস্বাধীনতা বিরোধী, সভ্যতাবিরোধী এমন কি ইসলাম নারী সম্পর্কে যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নারীবিদ্বেষী এসব তেতুল মোল্লারাই নারীদের মানসিক নির্যাতনের, কখনো বা দৈহিক নির্যাতনের ফর্মুলা তৈরী ক’রে তথা ফতোয়া রচনা করে তাদের বিকৃত মনোভাবের পরিচয় দিয়ে থাকে। মানুষ যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত চিন্তায় গ্রহান্তরে ভ্রমন করছে, আর তখন মোল্লা আহামদ শফী আবিস্কার করলো নারীদেরকে নিয়ে “তেতুলতত্ত্ব”,- মূর্খ কাকে বলে। বুঝা গেলো এ বুড়ো বয়সেও নারীদেরকে দেখে মৌলবী আহামদ শফী ঠিক থাকতে পারেন না, তার লালা ঝরতে থাকে বিধায় তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছে তিনি ধ্বজভঙ্গ রোগী নন। আসলে তার মনের কুৎসিত-নির্লজ্জ স্বভাবটিতে যা আছে তা-ই প্রকাশ করেছে। যৌবনকালে তার স্বভাবের একটি চিত্র একথা হতে প্রমাণিত হয়। এটাই ধর্মান্ধ গোঁড়া মোল্লা-মৌলবীদের কাজ। নারীদেরকে এরা মানুষই মনে করতে চায় না, এটা ধর্মান্ধ অজ্ঞ-মূর্খ মোল্লাদের বয়ান হতেই বুঝা যায়। মোল্লা শফীর এ ধরনের বয়ান দ্বারা পুরুষজাতিকেও যে চরম অপমান করা হয়েছে, চরম নারীলোভী সাব্যস্ত করা হয়েছে তা বোধসম্পন্ন লোকের জন্য বুঝা কোনো দূর্বোধ্য বিষয়ই নয়। আর সাধারণ মানুষ এবং নবী-রাছুল, অলি-আউলিয়াদেরকেও এক কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে তার “তেতুলতত্ত্বের” সূত্র দ্বারা। কাম-প্রেমের প্রভেদ আর অভেদ কি তা যদি কিঞ্চিৎ জানা থাকতো তবে এ ধরনের বয়ান মুখ দিয়ে বের হতো না। নবী-রাছুল এবং অলি-আউলিয়াদের সম্পর্কে মোল্লা শফীর সামান্যতম হুঁশ-আক্কেল যদি থাকতো তবে এ ধরনের নির্লজ্জ প্রলাপ বকতে পারতো না। কালেমাকে শাহাদাত করার মতো সামান্য জ্ঞানও যার নেই তিনি নাকি পীরে কামেল! যেনো কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। চোখে দেখে না তবু নাম তার নজর আলী। অন্যান্য নির্বোধগণও এ ধিকৃত এবং বিকৃত মানসিকতার মোল্লা শফীকে নিলর্জ্জের মতো বুযুর্গ, পীরে কামেল ইত্যাদি উপাধিতে ভুষিত করে প্রচার করে বেড়ায়। এরা হলো মুর্দার, তাদের হুঁশ-আক্কেল থাকলে এটা সম্ভব হতো না ! তার এ ধরনের বিকৃত চিন্তাটিকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য কতো যে বেকুফÑমূর্খগণ প্রস্তুত রয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। যাক, মানব সুরতে এবং মানবের সাথে আল্লাহ আছেন, কোরান-হাদিসের এ চরম সত্যকে অস্বীকার করে যারা অন্ধ-অনুমানে দূরে কোথাও আল্লাহকে চিন্তা করে তারাই হলো ধর্মান্ধ ধিকৃত মৌলবাদ। যে খোদাকে দেখে না সে-ই অন্ধ, যে আল্লাহর কালাম শুনে না সে-ই বধির এবং তার মুখে কখনো আল্লাহর কালাম আসবে না বিধায় সে বোবা।

“যে খোদাকে দেখে, খোদার পাক জাতে বাস করে, খোদার কালাম শুনে, খোদার কথা বলে সে-ই মুমিন, অলি।”

তাই সত্যপথ প্রাপ্ত মুমিন তথা নিজকে চিনে যারা খোদা চিনেছেন তথা অলি- আউলিয়াদের সাথে আলেম-মোল্লাদের বিরোধ চিরকাল। সমাজে কেউ অলি হলে তা না জানাটাই হলো অজ্ঞতা-মূর্খতা, তেমনি কেউ অলি না হলে তাকে অলি বলাটাও মূর্খতা। এ ধরণের অজ্ঞতা-মুর্খতার কারণেই আক্ষরিক বিদ্যার অধিকারী মুর্দা আলেম-মোল্লাদেরকে অলি-বুযুর্গ বলে সমাজের অধিকাংশই গ্রহণ করে নিয়েছে এবং নামের সাথে ‘রাহঃ’ যোগ করে দিচ্ছে-তাতে বুঝা যাচ্ছে তথাকথিত মুসলিম সমাজে ধর্ম জ্ঞান নেই। আছে রূপক-কাঠামো বা তাশাবাহা, যার অনুসরণ করা কোরানে নিষেধ আছে। এ যেনো কাঁচকেই হীরক বলে গ্রহণ করে নিয়েছে। কালের পরিবর্তনে কিছু সংখ্যক জ্ঞানীদের (অলি-আউলিয়াদের) দ্বারা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের চাষ হলেও তথাকথিত আলেম-মোল্লাদের ফতোয়ার কাঁদা ছোড়াছুড়িতে তারা আক্রান্ত হয়ে আছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লাম বলছেন -“কেয়ামতের পূর্বে অন্ধ-বধির এবং বোবাদের ফেৎনা সৃষ্টি হবে”। ঈমান-আকিদা সংরক্ষণ করা তাদের আরো একটি প্রতারণা। যে খোদাকে চিনেছে, রাছুলকে চিনেছে তার ঈমান কখনোই নষ্ট হয় না, যায় না। ঈমান আসলে যাওয়া আসার বিষয়ও নয়। ঈমান ঈমানই আছে আমাকে ঈমান আঁকড়ে ধরতে হবে। যে ঈমানকেই চিনেনি, দেখেনি সে ঈমান হেফাজত করবে কেমন করে?

তবে যার ঈমান অদৃশ্য, অন্ধ-অনুমান নির্ভর তার ঈমান অবশ্যই যেতে পারে। কারণ, সে ঈমানকে চিনেনি এবং ঈমানকে দেখেওনি। ঈমানকে চিনে তাকে গ্রহণ করাই হলো দ্বীন-এ-মুহাম্মদীর নীতি। ঈমানের মাঝেই রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাছুল। মুহাম্মদী ভেদ মানে প্রতিটি মানুষেরই ভেদ। মূলতঃ মানুষের লক্ষ্যস্থলও মানুষই। কাজেই নিজকে চিনলেই হয় সত্য লাভ। সত্যকে লাভ করাই হলো দ্বীন-এ-মুহাম্মদী। দ্বীন-এ-মুহাম্মদীতে যারা দাখেল হয়েছে তারাই হলো উম্মতে মুহাম্মদী। উম্মতে মুহাম্মদী যারা তারাই খাঁটি মুসলমান, খাঁটি হিন্দু, খাঁটি বৌদ্ধ, খাঁটি খ্রিষ্টান। ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবারে ঈমান জহুর হচ্ছে। জ্ঞানীর কাছে সেই ভেদ জানো। আল্লাহপাক তথাকথিত আলেম-মোল্লাদেরকে ধর্মের সঠিক জ্ঞান দান করুন, ঈমানকে চিনে আঁকড়ে ধরার এবং সার্বজনীন ইসলামে অধিষ্ঠিত হবার তওফিক দান করুন। কারণ, আল্লাহপ্রদত্ত মানবধর্ম দ্বীন-এ-মুহাম্মদী বা ইসলাম মোল্লাতন্ত্রের তথাকথিত ইসলামের কারণে কলঙ্কিত হয়ে চলেছে। মুসলমানগণ নির্যাতিত নয়, বরং মুসলমানের ছদ্মাবরণে যে সমস্ত বানরগুলো বাস করছে, ইসলামের নামে মুসলমানের পরিচয়ে অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম বা মানুষ হত্যা করে চলেছে, জাতি-গোত্রে বিভক্ত করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে তারাই অন্য জাতির কাছে মার খাচ্ছে। যারা সত্যিকারের মুসলমান তারা সর্ব জাতির কাছেই সম্মানিত হচ্ছে।

আল্লামা ইকবাল বলছেন – “কোথায় মুসলমান? সবই মুসলমান বেশে বানর নৃত্য করছে”। মোল্লা-মৌলবীদের অন্ধত্বের গোঁড়ামীর কারণে মুসলিম জাতি পিছনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানুষের মুক্তির জন্য যে কিতাব নাজিল হয়েছে সে কিতাব মানুষ নিজেই। নিজকে চেনার জন্যই গাইডস্বরূপ কাগজ কোরান। কোরানের মুহকামাত বুঝলে তার সবই জানা যায়। আর কোরানের মুহকামাত মানেই হলো মানুষতত্ত্ব। মানুষতত্ত্ব আর খোদাতত্ত্ব একই বিষয়। ‘আল ইনছানু সিররি ওয়া আনা সিররুহ’- এ হাদিস কুদসীর ভেদমর্ম এখানেই। এজন্যই একজন মুমিন বা দিব্যদৃষ্টিওয়ালার কালাম হলো ‘আনাল হক’। অন্ধ-বধির মোল্লা- মৌলবীরা সে জ্ঞান সম্পর্কে বেখবর, অথচ এরা নিজেদেরকে জ্ঞানী বলে ধারণা করে। এ সমস্ত অন্ধ-বধিরদের কারণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লাম এবং সত্যিকারের মুসলমানগণও অভিযুক্ত হচ্ছে। এরা শুধু ইলমুল কালামকেই ধর্ম জ্ঞান বলে জানে এবং মানে। আসলে ইলমুল কালাম ধর্ম জ্ঞান নয়, খোসা মাত্র। ধর্ম জ্ঞান হলো আত্মার জ্ঞান, যাকে গায়েবী ইলেমও বলা হয়। আত্মার জ্ঞানই হলো কোরানের মুহকামাত। কোরানের মুহকামাত যে জানে না, ধর্ম জ্ঞান সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ বেখবর এবং তারাই অন্ধ-বধির। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াচ্ছাল্লাম এবং কারবালার যুদ্ধ এ অন্ধ-অনুমানবাদীদের বিরুদ্ধেই সংঘটিত হয়েছে, হচ্ছে। রাব্বুল আলামিন যেনো ঐ সমস্ত অন্ধ-বধির-বোবা মোল্লা-মৌলবীদেরকে এবং তাদের অনুসারীদেরকে ইসলামের সত্যিকারের পথ লাভ করার তৌফিক দেন এবং কিছু বুঝ-জ্ঞান দান করেন এ কামনা করে শেষ করছি।

আপন খবর