হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
এ সুন্দর পৃথিবী নামক গ্রহের ধ্বংসের মূল তথা অশান্তির সৃষ্টির মূল কর্তা হলো মানব সুরতে বাস করা নরপশুগুলো। তাদের তাপের প্রভাবে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে এ গ্রহের মানুষগুলো। এ ধরনের নরপশু তথা নমরুদ/ফেরাউন/সরদার সউদ/দজ্জাল/অসুরদের থেকে রক্ষা করতেই প্রেরিত পুরুষদের/পরকালপ্রাপ্ত মানুষের /অবতারের/দূর্গার/গুরুর আগমন ঘটছে যুগে যুগে। ধর্মের হিজাব পড়া নরপশুগুলো সেজন্যই যুগে করেছে/করছে। সেজন্যই কোরানে ভক্ত-মুরিদানদেরকে(যারা ঈমান এনেছে) তাদেরকে প্রথমইে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে শয়তানের পথ পরিহার করে চলার জন্য। আর শয়য়তানের/ইভিলের/নারদের গুণ-খাছিয়তে আবৃত লোকটিই হলো মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রকাশ্য শত্রæ শয়তান (কোরান দ্রঃ)।
মূলতঃ শয়তানমুক্ত মানুষটিই হলো খাঁটি মুসলমান, খাঁটি হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান (আল ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত)। যারা কোরান বুঝে তারাই এ কথা অবশ্যই স্বীকার করবে। যখনই কারো মানবাত্মার/মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটে তখনই সে আর কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, তিনি হয়ে যান সব মানুষের। প্রমাণ চেয়ে দেখুন সমস্ত অলি-আল্লাহদের/সাধু দরবেশদের নিকট, তাদের রঁওযা বা মাজার জিয়ারতে সর্বজাতির মানুষ আগমন করছে। কারণ, ইনছানিয়াত আঠার হাজার মাখলুকাতের ভিতহর নেই, তার বাহিরে, চতুর্থ দায়রায় তার অবস্থান, যেখানে অপবিত্রতার কোনো স্থান নেই। এখানেই জান্নাতিদের বাস। সাম্প্রদায়িকতার/দ্ব›দ্ব-বিভেদ-বৈষম্যের দেয়াল ভাঙলেই মুক্ত মনের মানুষ সৃষ্টি হয়। সর্বধর্মের আড়ালে বাস করা নরপশুগুলো (যারা শয়তানের/ইভিলের নারদের ধর্মে দাখেল হয়ে আছে) তা হতে দিবে না। আর আলেম-মোল্লাদের বা অন্যান্য ধর্মের পুরোহিত, পাদ্রি, ব্রাহ্মণদের অবস্থান তিন জমাতের ভিতর, তাদের নিকট কয়জন যায় তা একটু চোখ মেলে চেয়ে দেখুন। ওরা সম্প্রদায়িকতার চারি দেয়ালে বাধা ষাঁড়, গুতাগুতিই ওদের ধর্ম। এ কথা কেই বিশ্বাস করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন, সবই তকদির।
তাদের ধর্মীয় উন্মাদনার কারনে, উগ্রতা-উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে/এখন হচ্ছে। সেজন্যই ওহাবী/কওমী আলেম-মোল্লারা বা তাদের সমমনাদের ধর্ম ব্যবসা রক্ষার্থে, মৌলবাদ ইহুদি, খ্রিষ্টানদের দালালি রক্ষার্থে, ব্যক্তিস্বার্থ পূরণাথ্যে আল্লাহর অলিদের প্রতি, তাদের রঁওযা/মাজারের প্রতি অনুষ্ঠানের প্রতি নানা ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, অন্যায় অত্যাচার করে চলেছে। মূলতঃ ওদের মানব ধর্ম বলতে কিছুই নেই, যা আছে তা হলো পশুত্বের ধর্মাচারণ। ওদের সুরত ধারণ করে/তাদের মুরিদ করে শয়তান/ইভিল/নারদ তাদের জবানে বলছে, ‘নবীজি মারা গেছেন, তার কোনো ক্ষমতা নেই, তিনি মাটির তৈরী, নূরের নয়, তিনি আমাদের মতোই মানুষ-এর বেশী কিছু নয়; কে আব্দুল কাদীর জিলানী, কে খাজা বাবা, কে শাহ্ জালাল? কিসের অলি ওরা সবাই ভন্ড, এরা নিজেরাই পাড় হতে পারবে না আবার আরেকজনকে পাড় করবে কীভাবে?(নাউজুবিল্লাহ্) এ ধরণের অন্ধ-বধিরগণের ধারণা তারাই একমাত্র ধর্ম পথে আছে, তাই তাদের কথা না শুনলে, না মানলে বন্য পশুর আচরণটি প্রকাশ করতে শুরু করে।
সেজন্যই তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ওহবিী কওমীদেরকে লক্ষ্য করে বলছে, (ভাস্কর্য নিয়ে কথা) “কতিপয় ধর্ম ব্যবসায়ীর নিকট ইসলাম ধর্ম লিজ দেয়া হয়নি (যুগান্তর/১৪-১২-২০২০ ইং) এবং ওরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে ভুল ব্যখ্যা করে চলছে (যুগান্তর/২৬-০২-২০২১ ইং)।” চেয়ে দেখুন কারা ভাস্কর্যের বিরোধীতা করেছিল/করছে? ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে আসমান-জমিন প্রভেদ মূর্খরা তা বুঝেনি, এ বিষয়ে মোল্লাদের ঐতিহাসিক ধারণা খুবই ক্ষীণ। মূলতঃ অজ্ঞতা, উগ্রতা এবং উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবটি প্রকাশ করাই হলো মূল বিষয়, ইহাই তাদের শিক্ষা। যখন ওহবিীরা জাজিরাতুল আরব দখল করে তখনও হাজার হাজার মানুষের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বাংলাদেশকেও ওহাবী রাষ্ট্র বানানোর জন্য মূর্খরা বানর নৃত্য করে চলেছে। আলেম-মোল্লাদের এবং তাদের সমমনাদের বিশ্বাস-ধারণা একমাত্র মাদ্রাসায় পড়লেই ধর্ম জ্ঞানী হওয়া যায়। এ আকিদই তাদেরকে ধর্মান্ধ হতে বাধ্য করেছে। এ ধরনের মিথ্যা অহমিকার কারণেই ওরা অজ্ঞতা-মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছে আর মুর্দা হয়ে অন্ধকার কবরে বাস করচে। ওরা যে উলঙ্গ-মুর্দা অন্ধকার কবরে বাস করছে তাও বুঝার হুঁশ-আক্কেল হারিয়ে ফেলেছে। বিগত যুগের আলেম-মোল্লাদের এবং বর্তমানের শত শত আলেম-মোল্লাদের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন তারা মাদ্রাসার বিদ্যা বিসর্জন দিয়ে গুরুর/মুর্শিদের নিকট বায়াত/দীক্ষা নিয়ে সাধনা করে কীভাবে অলিত্বের দরজা লাভ করেছেন, মুক্ত মনের অধিকারী হয়ে মহাপুরুষে অধিরোহণ করছেন।
ইতিহাসে তার হাজার হাজার নজীর রয়েছে, একটু চোখ খুললেই দেখতে পাবেন। আর যদি গিনিপিগের মত চোখ বন্ধ করে রাখেন তবে কিছুই দেখতে বা বুঝতে পারবেন না। আর যদি মাদ্রাসা ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে আর এ সত্য কথাটি কখনোই স্বীকার করতে পারবেন না। কারণ, তাহরে মাদ্রাসার ব্যবসা বন্দ হয়ে যাবার করুণ গোঙানীর সুর বাজতে থাকবে। মাদ্রাসার বিদ্যা ত্যাগ না করে কেউ অলিত্বের দরজা লাভ করতে পারে নি এবং পারবে না।
আমার বক্তব্য হলো- “যে মাদ্রাসা মানুষকে পীর/মুর্শিদ/অলি/গুরুমুখি না করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে যায়, মানুষকে সাম্প্রদায়িকতা হতে বের হয়ে মুক্ত মনের অধিকারী হতে দেয় না, ইনছানিয়াতের দিকে দাবিত করে না তথা মুনষ্যত্বের জাগরণ ঘটায় না, মানুষের প্রতি প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে না, অন্যান্য জাতির প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে না, ঐক্যতা প্রতিষ্ঠিত করে না, অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দেয়া শিখায়, তাই হলো শয়তানের মাদ্রাসা/শিক্ষালয়।” তা মূলতঃ কোনো ধর্ম শিক্ষাই অঙ্কুরোদগম হয়। এরাই সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ফতোয়াবাজি, জোর জুলুমের মতো জঘন্য ক্রিয়া-কর্মে রতো থাকে। কারণ, মাদ্রাসার/আলেম-মোল্লাদের কোরান শিক্ষা হলো আক্ষরিক (মুতাশাবেহাত/তাশাবাহা-যার অর্থ করতে কোরানে নিষেধ করা হয়েছে)- ইহা ইলমুল কালাম; ইহা ধর্ম জ্ঞান অবশ্যই নয়। সেজন্যই তারা বহু মতবাদের ঘূর্ণিপাকে পড়তে বাধ্য। যারা নরপশু, অসুরত্বকে মনের মাঝে লালন পালন করছে তারা কখনো এ সত্য কথাগুলো স্বীকার করবে না, না করাটাই অসুরত্বের প্রমাণ।
কোরান রূপক সাহিত্য, রূপকের আড়ালেই রয়েছে ধর্মজ্ঞান (মুহকামাত)। যে কোরানের মুহকামাত বুঝে নি সে ধর্মজ্ঞানের/কোরানের কিছুই বুঝেনি, কোরানের মুহকামাত বুঝার জন্য আরবী পড়ার কোনো শর্ত নেই, কামেল গুরু/মুর্শিদের স্বানিধ্যের প্রয়োজন। কারণ, নিজকে চিনলে কোরানের মুহকামাত বুঝা হলো। নিজকে চিনলে খোদাকে চেনা যায়- ইহাই কোরান শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। তেইশ বৎসর ওহী কালাম নাযিল হয়েছে মানুষ কি তা বুঝানোর জন্য। যে মানুষ কী তা-ই বুঝেনি/চিনে নি, তার কোরান পড়া মানেন শুধু পাতা উল্টানো ছাড়া আর কিছুই করেনি। তা যতো বড় মাওলানা , মুফতি, মুহাদ্দেস বা মুফাচ্ছেরই হোক না কেনো। আরবী ফারসি ভাষা শিক্ষা করা আর কোরান শিক্ষা করা আসমান জমিন প্রভেদ। একজন ইলমে সিনার অধিকারী/ধর্মজ্ঞানীর/গুরুর নিকট সে ভেদ জেনে নিলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর মিথ্যা অহংকার-অহমিকার বেড়াজালে আবদ্ধ হলে তা আর কোনো দিনই জানা যাবে না, শুধু বকবক করেই যাওয়া যাবে। স্পষ্ট ভাবেই বলছি, মাদ্রাসায় কখনো কোনোদিনই কোরান শিক্ষা দেওয়া হয় না/হয়নি, শুধু আরবী ভাষাটিই ভাষান্তরসহ শিক্ষা দেয়া হয়- যা কখনো কোরানের জ্ঞান নয়। যে সমস্ত মাওলানা-মুফতিরা মাদ্রাসার বিদ্যা বিসর্জন দিয়ে গুরুর/পীরের/মুর্শিদের নিকট বায়াত গ্রহণ করে ঈমানদার হয়েছে তাদের কালামগুলো পড়ে দেখুন তারা কি বলছে। মাওলানা রুমী (রাঃ) বলেছেন, “আমি কোরানের মগজ উঠিয়ে নিয়েছি, আর অস্থি-চর্ম কুকুরের জন্য ফেলে রেখেছি।”
যারা কোরানের ভেদ বুঝেনি/নিজকে চিনেনি তারা অস্থি-চর্ম নিয়েই ব্যস্ত আছে। যারা কোরানের অস্থি-চর্ম নিয়ে ব্যস্ত আছে তারাই স্বার্থের পরিপন্থী হলে ফতোয়াবাজি, মারামারি, কামড়াকামড়ি, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে চলছে। তিনি আরো বলেছেন, “আমি এতোদিন মাওলানাই ছিলাম না, যতো দিন না শামছ তাবরেজির গোলামী করেছি।” তাহলে মাওলানা রুমী (রাঃ) বায়াত হওয়ার পূর্বে কোন আলেম ছিলেন, তখন কোন ইলেম ছিল আর শামস তাবরেজি (রাঃ)- এর নিকট বায়াত হয়ে কোন এলেম শিখে তিনি খাঁটি আলেম হলেন এবং কোনটি সত্যিকারের ইলেম/আলেম তা কি বুঝা গেল না? যারা মাদ্রাসার আক্ষরিক বিদ্যার গৌরব করে পীর/ফকিরের সমালোচনা করেন, আপনারা দেখুন তো এ বিদ্যা তো মাওলানা রুমী (রাঃ) এর কম ছিল না। তিনি সব বিদ্যা বিসর্জন দিয়ে অশিক্ষিত/অক্ষরজ্ঞানহীন মহা সাধক হযরত শামছ তাবরেজী (রাঃ) এর নিকট বায়াত হয়ে ইলমে সিনা অর্জন করে খাঁটি আলেম হয়ে গেলেন। আপনারা কি খাঁটি আলেম না খুসকি আলেম তা কি স্পষ্ট হয়ে গেল না?
হাজার হাজার আলেম, মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দেস, মুফচ্ছের রয়েছে যারা মাদ্রাসার বিদ্যা অর্জন দিয়ে পীর/গুরু/মুর্শিদের নিকট বায়াত হয়ে কোরান শিক্ষা করে ইলমে সিনা অর্জন করে খাঁটি আলেম/ইনছানুল কামেলে পরিণত হয়েছেন/হচ্ছেন। মুর্শিদ/গুরু/আল্লাহর অলি/খাঁটি আলেমদের নিকট হতে এ ধরনের হাজারো কালাম প্রকাশ পেয়েছে, আর অজ্ঞ-মূর্খরা তা শুনে নাক সিটকিয়েছে; ইহাই অজ্ঞাত-মূর্খতার পরিচয়।