হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
শুধু আরবী ভাষা শিখলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না, ধার্মিক হওয়া যায় না। আপনাদের মতো হাজার হাজার মৌলবীগণ মাদ্রাসার বিদ্যা ত্যাগ করে গুরুর/মুর্শিদের নিকট বায়াত হয়ে, তাঁর খেদমত করে আল্লাহর অলি হয়েছে/হচ্ছে, তা সামান্য ইতিহাস ঘাটলেই জানা যায়। তা আপনারা জানলেও স্বীকার করবেন না। কারণ, তা হলে ধর্ম ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যাবার ভয় আছে যে, ইহাই তকদির। সেজন্যই অজ্ঞ-মূর্খরা মতলব পূরণ করার জন্য ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার, মারামারি-কামড়াকামড়ি করে বেড়ায়। ধর্ম এবং ধর্ম প্রচার গায়ের জোরে হয় না, কখনো হয় নি। প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা এবং জ্ঞানের (ইলমে এলাহী/ইলমে নব্বী/ইলমে মারেফাত/ইলমে সিনার) দ্বারা হবে। গায়ের জোরে গুন্ডা হওয়া যায়, ধর্ম প্রচারক হওয়া যায় না, পীর/মুর্শিদ হওয়া যায় না। একই পথের পথিক বামন মৌলবী রফিকুল ইসলামও। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য, লোক জমায়েত করার জন্য এ সমস্ত বামন মোল্লাদেরকে ওয়াজের মজলিশে উপস্থিত করা হয়। ধর্মজ্ঞান বিবর্জিত একটি চরম বেয়াদব ছেলে। ভাষার মধ্যে কোনো শ্লীলতা নেই, মাধুর্য্য নেই, কোনো জ্ঞান নেই। তার ফোনে অশ্লীল ভিডিও পাওয়া গেছে এবং সে নিয়মিত পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতো। সে জন্য তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় প্রেরণ করা হয়েছে (যুগান্তর-১৪ই এপ্রিল/২১ইং)। গ্রেফতার করা হয়েছে মৌলবী মামুনুল হক সহ আরো উগ্র-উচ্ছৃঙ্খল ধর্ম সন্ত্রাসীদেরকে। সমস্ত দেশটিকে ওরা অস্থির করে তুলেছে ধর্মের হিজাব পড়ে।
ফাঁদে পড়ে হেফাজত এখন নিজেদের ভুল স্বীকার করছে। কারণ, চুলার লাকড়ী সরে গেছে/নিবে গেছে তাই। মামুনুল হক নিজেই স্বীকার করেছে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করার পরিকল্পনা করেছিল (যুগান্তর- ২১/৪/২১ইং, ও অন্যান্য পত্রিকা) ইহা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, ইহাও মতলবি কথা। হেফাজত অরাজনৈতিক দল বলে দাবী করছে, অথচ প্রকাশ্যে তার বিপরীত আচরণ করছে। মূলতঃ ওরা বিষের বোতলে মধুর লেবেল লাগিয়ে মধু বলে জনগণের সামনে তুলে ধরছে। হেফাজতের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও তাদের এ ধরনের সন্ত্রাসী ক্রিয়া-কর্মকে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা করতে চেষ্টা করছে (যুগান্তর-২১/৪/২১ইং)। অথচ তাদের স্বার্থোদ্ধারের কুমতলবের বলি হয়ে মাদ্রাসার কতোগুলো কচি প্রাণ ঝড়ে গেল, মায়ের কোল খালি হলো, যুগে যুগে তাই করা হয়েছে। এ ধরণের লোকদেরকে যারা আলেম বলে তারা নিজেরাও শতভাগ পথভ্রষ্ট, পাগল। এ ধরনের শত শত ক্রিয়াকর্ম মসজিদ এবং মাদ্রাসার মৌলবী-মোল্লাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে এবং তাদের দ্বারা ইহা সম্ভবও, তা বাস্তবে এবং পত্রিকায় চোখ বুলালেই দেখা যাবে/জানা যাবে। মৌলবী বাবুনগরী ও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে হেফাজত নেতা মৌলবী শফিকে হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে, তা তাদের ক্রিয়াকর্ম হতে বুঝা যাচ্ছে ইহা তাদের দ্বারা সম্ভবও হতে পারে। এখন বুঝা যাচ্ছে, ক্ষমতার শীর্ষে যাওয়ার জন্যই মৌলবী মামুনুল হক, বাবুনগরী’রা এ ধরণের ক্রিয়াকর্ম চালাচ্ছে। তাতে হেফাজতের মধ্যে দ্বন্দ-বিভেদ, মামলা চলছে, অনেকে হেফাজত হতে পদত্যাগ করছে। হেফাজতের অন্তরালে জামায়াত শিবিরও লুকিয়ে রয়েছে। এরা যে কতো উগ্র, গোঁড়া, উচ্ছৃঙ্খল বেয়াদব তা তাদের দ্বারা ঘটিত সাম্প্র্রতিক ঘটনাবলী এবং তাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য শুনলেই বুঝা যাবে। ওরা ইসলামের হেফাজতের ধূয়া তুলছে, অথচ নিজেদের চরিত্রের হেফাজত’ই করেনি। যারা ইনছানি আত্মা হারিয়ে হায়ানী আত্মার উপর চড়ে বেড়াচ্ছে (সুরা আনআম) তারা আবার ‘হেফাজতে ইসলামের’ নামে সাইন বোর্ড তুলে চোখ রাঙিয়ে নিজেদের সাফাই গেয়ে চলছে, অন্যকে হেদায়েতের বাণী শোনাচ্ছে!
নিজেদের স্বভাবের হেফাজত হলে ইসলাম হেফাজত হতো। তা না করে তারা কি হেফাজত করছে তাও বুঝে নি। ইসলাম কোথায় আর হেফাজত করছে কি! বস্তু ছাড়া গুণ থাকে না, ইসলাম কি বস্তু, কি জিনিস তা না বুঝেই অনুমান-কল্পনার পিছনে লেজ তুলে দৌঁড়াচ্ছে। সে জন্যই তাদের স্বভাব হতে/আচরণ হতে হায়ানী আত্মার গুণ-খাছিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। বিধায় রাছুলপাক (সাঃ) বলছেন, “আল ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত।” অর্থাৎ ইসলাম হলো স্বভাব ধর্ম। আরো বলছেন, “আমি এসেছি মানুষের উৎকৃষ্ট স্বভাব/গুণসমূহ (নফসে মুৎমাইন্নাহ্) জাগিয়ে তোলার জন্য (মেশকাত)।” যারা মুসলমান তাদের ভাব-ভাষা উগ্র-উচ্ছৃঙ্খল হয় না, আক্রমণাত্মক হয় না। কারণ, শয়তানমুক্ত মানুষটিই হলো মুসলমান। মুসলমান কখনো অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দিবে না (সুরা আনআম-১০৮), অন্য ধর্মের লোকদের উপর আক্রমণ করবে না, আক্রান্ত না হলে। জোর করে মুসলমান বানাবে না-এ বিষয়ে যতো যুক্তিই দেয়া হোক না কেনো সবই বাতিল বলে গণ্য। কোরান বলছে, “লা ইকরাহা ফিদ্দ্বীন” অর্থাৎ ধর্মের মধ্যে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই, তা নিজ ধর্মে কি পর ধর্মে। যারা জোর-জুলুম করে মুসলমান বানায় তারা নিজেরাই মুসলমান নয়। জোর করে হিন্দু বানানো যাবে না, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বানানো যাবে না। চেয়ে দেখুন, হেফাজতের নেতা মৌলবী মামুনুল হকের চেহারায়ও সেই উগ্রতা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দৃশ্যমান, সাথে রয়েছে কপালের মধ্যে দুটি ‘খারিজী’ চিহ্ন। তার বক্তব্যে উগ্রতা-হিং¯্রতা, উত্তেজনাময় উচ্ছৃঙ্খলতা এবং আক্রমণাত্মক ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ধরনের লোকদেরকে আমি/আমরা কোনো মতেই মুসলমান বলে স্বীকার করি না- তা যতো যুক্তিই দেখানো হোক না কেনো।
“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ”-এর ৫৫১ জন শীর্ষ আলেম হেফাজতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছে (যুগান্তর-২৫/৪/২১ইং)। ধর্মের হিজাব পড়ে এ ধরণের মুসলমানের সংখ্যা ইয়াজিদের সৈন্যদের মধ্যে ছিল ত্রিশ হাজার। এ কথা কেউ বিশ্বাস করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন, সবই তকদির কিছু বলার নেই। ব্যবহারে বংশের পরিচয় বিধায় সে/তারা হায়ানী আত্মার বংশধর বলে স্বীকৃত। এ ধরনের আচার-আচরণের সর্বকালের মুসলমান নামধারীদেরকেই আমি/আমরা ঘৃণা করি। এরাই কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (্আঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল/করছে। তাদের মধ্যেও কোরানের হাফেজ ছিল, মসজিদের ইমাম ছিল, মুফাচ্ছের ছিল। আর তাদেরকে দেখে হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) বলছিলেন, “আলাইছা ফি মুসলিমুন ?” অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কি একজন মুসলমান নেই ? আমরাও তা-ই বলি। ইয়াজিদ আর ইয়াজিদের সৈন্যদের ঈমান-আকিদা আর বর্তমান কওমী ওহাবী বা অন্যান্য মৌলবাদিদের ঈমান-আকিদা একই। সুতরাং এরাই তারা যারা কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আওলাদুন্নবীকে, নবীজির আহলে বাইয়্যেতের সদস্য হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)-কে শহীদ করে ধর্মের কর্ণধার সেজেছিল। সেই হতে ইসলামের বিকৃতি কর্মটি ইয়াজিদ ও তার অনুসারীদের দ্বারা পূর্ণতা পেল। ইয়াজিদের সেনাপতি ওমর বিন সা’দ বলেছিল, “তোমরা তাড়াতাড়ি হুসাইনের মাথা কেটে নিয়ে এসো, দেখো তার জন্য যেন আবার আছরের নামাজ কাজা না হয় !” সেই মুনাফিকদের কথাটিই এখনকার মুনাফিক নামাজীরা বলছে, যা-ই করো, নামাজ পড়। এখন নামাজ পড়লে হাশরের দিন ছোয়াব পাবে-এ ধরনের ধোঁকাপূর্ণ কথার কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হচ্ছে। কথাটি শুনতে মধুর মতো হলেও তাতেই রয়েছে অজ্ঞতা-মূর্খতার এক ভয়ংকর অন্ধকার ফাঁদ। যা-ই করো কথাটির মধ্যে ভালো-মন্দ সর্ব কর্মই রয়েছে। অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম, মিথ্যা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত ইত্যাদি মনে পোষণ করলে নামাজ মাত্রই হবে না। যাক, এখন ওরা হাজারো দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে আছে। মৌলবাদি ও তাদের দোসর- স্বজনরা আজ সু-সংগঠিত হয়ে কাজ করছে। তাদেরকে চিনতে হবে এবং তাদের পরিচয় সমাজে তুলে ধরতে হবে। নয় তো সাধারণ মানুষ তাদের ঈমান-আকিদা রক্ষা করতে পারবে না, পথভ্রষ্ট হবে/হচ্ছে। যদি কেউ কারবালার মুনাফিক ইয়াজিদ ও তার সৈন্যদের দেখতে চায় সে যেন এ সমস্ত নরপশুগুলোকে চিনে দেখে নেয়। দজ্জাল মুসলমান বেশেই মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে/করছে। সে কোরানের আক্ষরিক জ্ঞানে বড় পন্ডিত হবে।
ঈমানদারদেরকে সাবধান হতে হবে, দাজ্জালকে চিনতে হবে। দাজ্জালের হুংকার শোনা যাচ্ছে। সে হুংকার দিয়ে বলছে, “সমস্ত নবীদের/অলিদের মাজার-রঁওযা, দরবার শরীফ, খানকাহ্ ভেঙ্গে দাও, মাজার পূজা বন্ধ করো, ওরশ বন্ধ করো, মিলাদ বেদআত, গান বাজনা হারাম।” যদি দাজ্জাল মোল্লাদের ভাষায় তথাকথিত শরিয়ত বিরোধী কাজের জন্য মাজার-রঁওযা, দরবার-খানকাহ্ ভেঙ্গে ফেলতে হয়, তবে নারী ধর্ষণ, শিশু বলাৎকারে জন্য, মানুষের ঈমান-আকিদা ধ্বংস করার জন্য, জঙ্গিবাদের কারণে আগে তাদের সমস্ত কওমী মাদ্রাসাগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে, ওদের ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। ওদের মাদ্রাসায় শত শত নারী ধর্ষিত হচ্ছে, শিশু বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। নাকি বলবেন, তাতে কি হয়েছে, নামাজ পড়লেই সাতখুন মাফ! এজন্যই বুঝি আপনাদের উপদেশটি প্রচার করছেন, “যা-ই করুন, নামাজ পড়েন !” নামাজ বেহেশতের চাবি -এ চাবি মুলোর মতো ঝুলিয়ে নামাজের চাবি রেখেছেন লুকিয়ে। ফলে পুণ্যের স্থলে পাপ সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষগুলো পশুত্বের স্বভাবের প্রভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ ধরণের লোক দেখানো নামাজীদের স্থান ওয়াইল দোযখে (সুরা মাউন)। ইহা কি প্রতারণা নয় ? আপনারা কি করছেন চেয়ে দেখুন, দাজ্জালের ডান চক্ষু কানা, বাম চক্ষু সামান্য ভালো এবং সে পশুর পৃষ্ঠে আরোহণ করে চলছে এবং সে নিজেও পশুর মতো হুংকার দিয়ে চিৎকার করছে। সে তার ডান হাতে বেহেশত আর বাম হাতে দোযখ দেখাচ্ছে। সে নিজেকেই একমাত্র সত্য পথের পথিক বলে দাবী করছে। সাধারণ মানুষগুলোকে তার/তাদের ফাঁদে ফেলে পথভ্রষ্ট করে চলছে।